ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

‘অন্তর্বর্তী সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা-নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ০৮ ২২:২৯:০৬
‘অন্তর্বর্তী সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা-নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’

অন্তর্বর্তী সরকার সংবাদপত্রের স্বচ্ছতা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতার নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষা ও উন্নয়নে যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বানের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘রেসপন্স টু নোয়াব: সেটিং দ্য রেকর্ড স্ট্রেইট’ শিরোনামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ভুল তথ্য ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও আমরা ব্যতিক্রমী সংযম প্রদর্শন করেছি।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, টেলিভিশন টক শো এবং কলামগুলোতে প্রায়শই অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে মিথ্যা এবং উসকানি মূলক দাবি প্রকাশিত হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, তারপরও আমরা কোনো ধরনের সেন্সর আরোপ করিনি বা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেইনি। উসকানির পরেও অভিযোগ তুলিনি, এমনকি কারও লাইসেন্সও স্থগিত করিনি। বরং অতীতের শাসনামলে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে পুনরায় প্রকাশ বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছি। এটি নিঃসন্দেহে বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।

সরকারে প্রবেশাধিকার অবাধ রয়েছে

শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের আমাদের উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের কাছে উন্মুক্ত ও সরাসরি পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো সাংবাদিককে তাদের আউটলেট বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার থেকে কেউ বঞ্চিত হয়নি। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণে তা প্রতিফলিত।

সচিবালয় প্রবেশ প্রক্রিয়ার সংস্কার

প্রেস সচিব বলেন, সংশোধিত প্রবেশাধিকার ব্যবস্থার সমালোচনা শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং এতে ভুল তথ্যও ছড়ানো হয়েছে।

তিনি জানান, আগের নীতিমালা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যার ফলে প্রবেশাধিকারপত্র এমন অনেকের হাতে পৌঁছেছিল, যাদের সঙ্গে প্রকৃত সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্কই ছিল না। এদের মধ্যে কিছু ছিলেন রাজনীতিবিদ, লবিস্ট এবং সুবিধাবাদী যারা বিশেষ প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে নীতিনির্ধারণে অন্যায্য প্রভাব ফেলতেন।

শফিকুল আলমের বলেন, আমরা সেই ভঙ্গুর কাঠামো ভেঙে অস্থায়ী পাস ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছি, যা নিশ্চিত করবে প্রকৃত সাংবাদিকরা সচিবালয়ে অবাধ প্রবেশাধিকার বজায় রাখতে পারবেন।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই সংস্কারের লক্ষ্য প্রবেশাধিকার সীমিত করা নয়, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়াকে সরিয়ে তার জায়গায় স্বচ্ছতা ও সততা প্রতিষ্ঠা করা।

প্রেস সচিব জানান, আগের নীতিমালায় স্বীকৃত সাংবাদিকদের সরকারের সুরে কথা বলতে বাধ্য করার মতো শর্ত ছিল, যা সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। এছাড়া, নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত কিছু অপমানজনক ধারা ছিল, যা অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধন করেছে।

তিনি আরও বলেন, বর্ধিত নবায়ন সময়সীমাসহ নতুন স্বীকৃতিপত্র প্রদানের প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: একটি পারস্পরিক দায়িত্ব

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকসহ সকল নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তার ভাষায়, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলেও এই দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ হয়ে যায় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে।

তিনি জানান, নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশের প্রতি এই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় এ বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রস্তাব করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো সাংবাদিকদের জন্য আইনি সুরক্ষা জোরদার করা এবং সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ের কারণে সৃষ্ট স্ব-সেন্সরশিপ কমানো।

প্রেস সচিব বলেন, সরকার প্রস্তাবিত আইনটি জারি করার কথা বিবেচনা করছে।

চাকরির নিরাপত্তা

শফিকুল আলম বলেন, এটি স্পষ্টভাবে বলা উচিত, যেসব সাংবাদিককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারি নির্দেশে নয়। বরং গণমাধ্যম মালিকদের নেওয়া সম্পাদকীয় এবং কৌশলগত করপোরেট পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফলে তা করেছেন।

তিনি উল্লেখ করেন, এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নির্দেশ বা চাপ নয়, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের প্রতিফলন ঘটায়।

শিল্পের মধ্যে প্রতিফলনের আহ্বান

তিনি বলেন, যদিও আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি নোয়াব দোষারোপ করার আগে নিজেরাই দেখুক।

তিনি আরও বলেন, তাদের অবশ্যই তার নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড যাচাই করতে হবে এবং সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে বিশেষ করে যখন মজুরি শোষণ, শ্রম অধিকার অস্বীকার, পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করা এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে।

প্রেস সচিব বলেন, একটি সূক্ষ্ম সংকটকালীন সময় তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে তারা গণমাধ্যম যাতে ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানো বজায় রেখেছে।

তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা মেনে চলি।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিক পক্ষগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়, তাহলে তা আরও বেশি গুরুত্ব পাবে।

প্রেস সচিব বলেন, ঘটনার ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে করা অভিযোগগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না, তারা কেবল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত