ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রে এটি আমার নীরব প্রতিবাদ: হাসনাত

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ০৭ ২২:১৩:০২
অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রে এটি আমার নীরব প্রতিবাদ: হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার বিষয়ে বলেছেন, এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।

কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির শোকজ নোটিশের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) শোকজ নোটিশের জবাবটি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে শেয়ার করেন।

শোকজ নোটিশের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে একটি এমন রাষ্ট্র, যেখানে কোনো স্বৈরাচার আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং প্রত্যেক নাগরিক সম্মানজনকভাবে বসবাস করতে পারবেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছিল।

তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হচ্ছে, এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্র তৈরির সময় সেই মানুষদের কথা একেবারেই উপেক্ষিত হয়েছে, যারা সেই অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। শহিদ পরিবারের সদস্য, আহতরা কিংবা যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই মতামত প্রকাশের সুযোগ পাননি। এমনকি অন্তর্ভুক্তির সামান্য সম্মানটুকুও তাঁদের দেওয়া হয়নি। এই উপেক্ষা আমাদের ব্যথিত করে।

ঘোষণাপত্রের কিছু উপাদান অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়

তিনি আরও লেখেন, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু উপাদান দেখি, যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এ নেতা লেখেন, উপরন্তু, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাইবোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহিদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনও ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি।

কাজেই, পরদিনই আমি ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পূর্বে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করা, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বুঝে নেওয়া এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবা। একইসাথে, এটি ছিল অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার এক ধরনের নীরব প্রতিবাদ।

এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ৪ আগস্ট রাতে প্রথমে আমি দলের আহ্বায়ক জনাব নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাঁকে না পেয়ে মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে জানাই যে, আমি আমার স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দু’দিনের একটি সফরে যাচ্ছি। যেহেতু তিনি তখন আহ্বায়ক মহোদয়ের সঙ্গেই অফিসে ছিলেন, আমি অনুরোধ করি বিষয়টি যেন আহ্বায়ক মহোদয়কে জানান। তিনি আশ্বস্ত করেন যে তা করবেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী আমাকে নিশ্চিত করেন যে, তিনি আহ্বায়ক মহোদয়কে অবহিত করেছেন এবং তাতে সম্মতি পাওয়া গেছে।

পরবর্তীতে আমার সঙ্গে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, স্বস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা- খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।

টার্গেট করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, মিডিয়া

এনসিপির এ নেতা লেখেন, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিমানবন্দর থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ সেইসব উপস্থাপন করেছে।

কিছু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে। অথচ তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির এ নেতা লেখেন, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার এই সম্মিলিত ‘ডিমোনাইজেশন’ টেকনিক আজকে আমাদের টার্গেট করেছে। ভবিষ্যতে অন্য যে কাউকে করতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়া এই একই প্যাটার্নে হাসিনার আমলেও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করত। নতুন বাংলাদেশেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়ার এই পুরনো অপরাধপ্রবণতা আমাকে একইসাথে অবাক এবং ক্ষুব্ধ করে।

এবং এই পুরো ঘটনার সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় দিক ছিল তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত নগ্ন ও কুরুচিপূর্ণ স্লাটশেইমিং। শুধুমাত্র একজন নারী হওয়ার কারণে তাসনিম জারাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হয়। কিছু মিডিয়া চক্রান্তমূলকভাবে তাঁকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর শিরোনাম প্রকাশ করতে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের সমন্বিত এই আক্রমণ একটি নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুস্পষ্ট চেষ্টা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা।

হাসনাত লেখেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। অথচ অভ্যুত্থানের পরপরই গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু মিডিয়ার সমন্বিত প্রচেষ্টায় একজন নারীর বিরুদ্ধে যে নোংরা আক্রমণ চালানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি লেখেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের পার্টির উচিত ছিল ওই গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া। কিন্তু তার বদলে পার্টি যে ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ জারি করেছে, তাতে বরং সেই মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারই উৎসাহিত হয়েছে।

তিনি আরও লিখেছেন, শোকজ নোটিশ সাধারণত গঠনতন্ত্র বা বিধিবিধানের কোনো নির্দিষ্ট ধারার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু আমাকে দেওয়া নোটিশে তেমন কোনো স্পষ্ট লঙ্ঘনের উল্লেখ নেই, কারণ আমি কোনো নিয়ম ভাঙিনি। এই ধরনের বিধিবহির্ভূত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শোকজ জারি করে তা তড়িঘড়ি করে মিডিয়ায় প্রকাশ করা কতটা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়, তা ভাবা উচিত।

সবশেষে এ নেতা লেখেন, আমি এখনো এনসিপির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বাস করি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মতপার্থক্যের প্রতি সহনশীলতা এবং গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমেই আমাদের দল আরও পরিপক্ব হয়ে উঠবে। আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত