ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ইতিহাসের ভয়াবহ ১০ ভূমিকম্পের মাত্রা কেমন ছিল?

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ৩০ ১৭:৫৯:০৩
ইতিহাসের ভয়াবহ ১০ ভূমিকম্পের মাত্রা কেমন ছিল?

রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের কামচাটকা উপদ্বীপে ৮.৮ মাত্রার একটি অতি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী কম্পন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ভূমিকম্পের পর জাপান, হাওয়াই থেকে শুরু করে উত্তর আমেরিকা ও নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এই ভূমিকম্পটিকে এর বিধ্বংসী ক্ষমতা ও শক্তির নিরিখে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই ঘটনা আবারও আমাদের গ্রহের ভয়ংকরতম প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ইউএসজিএস মূলত ১৯০০ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভূমিকম্পের রেকর্ড সংরক্ষণ করে আসছে। তাদের তথ্য অনুসারে, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিধ্বংসী ১০টি ভূমিকম্প হলো:

১. ভালদিভিয়া, চিলি (১৯৬০): ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯.৫। এটি প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই মহাদুর্যোগে ১,৬৫৫ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

২. প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড, আলাস্কা (১৯৬৪): ৯.২ মাত্রার এই ভূমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা ও পশ্চিম উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এতে ১৩০ জন নিহত হন এবং তৎকালীন সময়ে প্রায় ২৩০ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

৩. সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া (২০০৪): ৯.১ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি "বক্সিং ডে সুনামি" নামে পরিচিত। এটি ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল, যা ছিল রেকর্ডকৃত ইতিহাসে দীর্ঘতম। এর জেরে ভারত মহাসাগরের ১৪টি দেশে ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে, যেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা কোথাও কোথাও ৩০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এই প্রলয়ংকরী দুর্যোগে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

৪. তোহোকু, জাপান (২০১১): জাপানের উপকূলে আঘাত হানা ৯.১ মাত্রার এই ভূমিকম্প এবং তৎপরবর্তী সুনামি এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এতে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান এবং ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে, যা একে ইতিহাসের অন্যতম বিপর্যয়কর ঘটনায় পরিণত করে।

৫. কামচাটকা, রাশিয়া (১৯৫২): ৯.০ মাত্রার এই ভূমিকম্পটিও কামচাটকা উপদ্বীপে আঘাত হেনেছিল। যদিও এতে সরাসরি প্রাণহানির কোনো রেকর্ড নেই, তবে এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

৬. (যৌথভাবে) চিলি এবং রাশিয়া: ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চিলিতে আঘাত হানা ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প এবং আজকের (৩০ জুলাই, ২০২৫) রাশিয়ার কামচাটকার ভূমিকম্পটি যৌথভাবে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। ২০১০ সালের চিলির ভূমিকম্পে ৫২৩ জন নিহত হয়েছিলেন। কামচাটকার ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনও পাওয়া যায়নি।

৭. ইকুয়েডর-কলম্বিয়া (১৯০৬): দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের উপকূলে আঘাত হানা ৮.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

৮. র‍্যাট আইল্যান্ড, আলাস্কা (১৯৬৫): যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার জনবসতিহীন র‍্যাট দ্বীপে ৮.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। যদিও ভূমিকম্পে সরাসরি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কিন্তু এর ফলে সৃষ্ট সুনামি হাওয়াই এবং জাপানের উপকূলে ব্যাপক ক্ষতি করে।

৯. আসাম-তিব্বত (১৯৫০): ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং তিব্বত সীমান্তে আঘাত হানা ৮.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ব্যাপক ভূমিধস হয় এবং প্রায় ৪,৮০০ জন মানুষ প্রাণ হারান। এটি ওই অঞ্চলের ভূগোলকেই পাল্টে দিয়েছিল।

১০. উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া (২০১২): ২০০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের epicentre-এর কাছেই ভারত মহাসাগরে ৮.৬ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা বিশ্বজুড়ে সুনামি সতর্কতা জারি করতে বাধ্য করে। তবে সৌভাগ্যবশত, সেবার সুনামির প্রভাব বিধ্বংসী ছিল না।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত