ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

শেয়ারবাজারের শর্ত পূরণে ৬০ কোম্পানিকে বিএসইসির আল্টিমেটাম

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ১৬ ০৬:৫৮:১০
শেয়ারবাজারের শর্ত পূরণে ৬০ কোম্পানিকে বিএসইসির আল্টিমেটাম

শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আবারও ৬০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে তাদের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ জমা দিতে বলেছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকার জন্য এই শর্ত পূরণ অপরিহার্য।

ঈদুল আজহার ছুটির আগেই কমিশন এই বিষয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) তালিকাভুক্তি বিধিমালা অনুযায়ী, মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে হলে একটি কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকা আবশ্যক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই শর্ত পূরণে ব্যর্থতাকে সিকিউরিটিজ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছে।

প্রসঙ্গত, বিএসইসি এর আগেও এই কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগই তা মানতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এবার তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা শর্ত পূরণে ব্যর্থ হবে, তাদের মূল বোর্ড থেকে এসএমই (SME) বা অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (ATB) প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত করা হতে পারে।

এ বিষয়ে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, " আমরা শেয়ারবাজারে স্বল্প পরিশোধিত মূলধন নিয়ে কোনো কোম্পানি দেখতে চাই না। কারণ এটি বাজারের সুনাম ক্ষুণ্ন করে।"

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম মূলধন পূরণের জন্য নতুন তহবিল সংগ্রহসহ বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। যদি কোনো কোম্পানি নতুন মূলধন সংগ্রহে ব্যর্থ হয়, তবে বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনা করা হবে। "আমরা এমন কোম্পানিগুলোকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত করতে পারি। যদি কোনো কোম্পানি এসএমই প্ল্যাটফর্মের জন্যও যোগ্য না হয়, তাহলে আমরা অন্যান্য বিকল্প অন্বেষণ করব।"

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের স্টকগুলো অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতির হয় এবং কিছু অসাধু বিনিয়োগকারী দ্বারা এগুলো সহজেই কারসাজির শিকার হতে পারে।

ওই কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেন, স্টক ডিভিডেন্ড ইস্যু করা মূলধন পূরণের একটি বৈধ উপায় নয়, কারণ এটি কেবল শেয়ারের সংখ্যা বাড়ায় কিন্তু প্রকৃত মূলধন বৃদ্ধি করে না। কমিশন চায় কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য প্রকৃত তহবিল সংগ্রহ করুক।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ৬৪টি কোম্পানিকে তাদের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণের জন্য পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছিল, যাতে তারা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে পারে। ওই বছর কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এই ফার্মগুলোর সামগ্রিক অবস্থা যাচাই করতে এবং স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোর আর্থিক কর্মক্ষমতা উন্নত করার একটি প্রক্রিয়া খুঁজতে বলেছিল। কোম্পানিগুলোকে চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পরিকল্পনা প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছিল।

এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার নিচে রয়েছে, ১৫টি কোম্পানির ১০ কোটি টাকার নিচে, ২১টি কোম্পানির ২০ কোটি টাকার নিচে এবং বাকি কোম্পানিগুলোর ৩০ কোটি টাকার নিচে মূলধন রয়েছে।

এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু কোম্পানি ভালো পারফর্ম করছে। তবে বেশ কয়েকটি লোকসানে রয়েছে এবং কয়েকটি তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম কোনো বৈধ তথ্য বা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারী এবং বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কারণে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার অত্যন্ত অস্থির হয়ে থাকে। কিছু বিনিয়োগকারী এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হন। এছাড়াও, অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখেন এবং পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে তেমন আগ্রহ দেখান না।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত