ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২
বিশ্বজুড়ে কন্যাসন্তানের আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পুত্রসন্তান-প্রীতির প্রবণতায় এখন দেখা যাচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। সাম্প্রতিক এক বৈশ্বিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, অনেক দেশেই বাবা-মায়েরা এখন কন্যাসন্তানকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। ঐতিহ্যগতভাবে ছেলেসন্তানকেই পরিবারের উত্তরাধিকার, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভরসা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই মনোভাব বদলাচ্ছে।
বিশেষ করে চীন ও ভারতের মতো জনবহুল দেশগুলোতে এই পরিবর্তন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। একসময় এই দুই দেশে গর্ভে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করে কন্যাভ্রূণ নষ্ট করার ঘটনা হরহামেশাই ঘটত। শুধুমাত্র ১৯৯০ সাল থেকে আনুমানিক দুই কোটির বেশি কন্যাশিশু জন্মানোর আগেই হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা দ্য টাইমস। তবে চলমান প্রবণতা বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কন্যাভ্রূণ গর্ভপাতের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে মাত্র এক লাখ সাত হাজারে, যা ২০০০ সালের তুলনায় প্রায় সাত গুণ কম। তখন এই সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৬ হাজার।
এই রূপান্তরের অন্যতম দৃষ্টান্ত দক্ষিণ কোরিয়া। ১৯৯০-এর দশকে যেখানে প্রতি ১০০ কন্যাশিশুর বিপরীতে ১১৭টি ছেলেশিশু জন্মাত, সেখানে এখন এই হার নেমে এসেছে স্বাভাবিক ১০৫:১০০-এ। চীন ও ভারতে এখনো প্রতি ১০০ কন্যার বিপরীতে যথাক্রমে ১১১ ও ১০৭টি ছেলে জন্ম নিচ্ছে, তবে সেখানেও ধীরে ধীরে ভারসাম্য ফিরছে।
এমন মনোভাবের পরিবর্তন পশ্চিমা দেশগুলোতেও স্পষ্ট। ‘ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেলজিয়াম, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোতে বাবা-মায়েরা প্রথম সন্তান কন্যা হলে দ্বিতীয় সন্তানের কথা কম ভাবছেন। অর্থাৎ, তারা কন্যাসন্তানেই সন্তুষ্ট।
১৯৮০ দশকে ফিনল্যান্ডে দেখা যেত, কন্যাসন্তান জন্মের পর মায়েরা অনেক সময়েই সন্তানের বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেন। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে এই প্রবণতা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশসহ সাব-সাহারান আফ্রিকার অনেক দেশেও পরিবারে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাপানেও দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য মনোভাবগত পরিবর্তন। সেখানে এক সন্তান নিতে ইচ্ছুক ৭৫ শতাংশ দম্পতি কন্যাসন্তানকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, যেখানে ১৯৮২ সালে এই হার ছিল ৫০ শতাংশেরও কম।
যুক্তরাষ্ট্রেও কন্যাসন্তান চাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা কৃত্রিম প্রজননের ক্ষেত্রে অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে কন্যাভ্রূণ বেছে নিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কন্যাসন্তানকে অনেকেই এখন বেশি যত্নশীল, সহানুভূতিশীল ও সহজে লালন-পালনযোগ্য মনে করেন। চীনের অতিরিক্ত ছেলেশিশুর কারণে অনেকেরই বিয়ে হচ্ছে না, ফলে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ব্রিটেনেও ছেলেদের মধ্যে বেকারত্ব ও শিক্ষাজনিত দুর্বলতা বাড়ায় মেয়েদের ‘নিরাপদ পছন্দ’ হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা পুত্রসন্তান-প্রীতির ধারা এখন বদলাচ্ছে। নতুন বিশ্বে কন্যাসন্তান হয়ে উঠছে সম্ভাবনার প্রতীক।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- এশিয়া কাপ ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান,সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- নতুন দিগন্তে বেক্সিমকো, শেয়ারবাজারে আশার আলো
- দুই বছরের ডিভিডেন্ড পেল তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারের ৮ কোম্পানি
- বিএসইসি-ডিএসই’র নাকের ডগায় লোকসানি শেয়ার নিয়ে কারসাজি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৬ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ইবনে সিনা ফার্মা
- চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- দু্ই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- ১৪ প্রতিষ্ঠান রদবদলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে, বাড়ছে আতঙ্ক
- শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থনীতির দুই শীর্ষ নেতার কড়া সমালোচনা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ কোম্পানিতে
- মুনাফা কমেছে জুতাশিল্পের দুই জায়ান্টের
- আর্থিক চাপ কাটাতে ভবন বিক্রি করছে শেয়ারবাজারের দুই প্রতিষ্ঠান