ঢাকা, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২
দেশের ৬৩ লাখ বেকার, ২১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী
ডুয়া নিউজ: বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগণের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ বেকার, যাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশই শিক্ষিত। এর মধ্যে ২১ শতাংশ বেকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেও কোনো কাজে নিয়োজিত নন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণরা সবচেয়ে বেশি বেকার, যাদের সংখ্যা ৩৮ লাখ। তাঁরা বছরের পর বছর চাকরির খোঁজে ছুটছেন।
এ বিষয়ে বিবিএসের উপপরিচালক আজিজা রহমান জানান, ‘শ্রমশক্তি জরিপে এসডিজির সূচক, কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও শ্রমবাজারের সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বেকারত্ব কিছুটা কমেছে, তবে উচ্চ শিক্ষিত বেকারত্ব বেড়েছে। আশা করছি সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুসারে, দেশে বর্তমানে ৬২ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ বেকার রয়েছে। এই বেকারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ হচ্ছে, কাজ করতে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন এবং সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন। এ রকম মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৫ হাজার, যা মোট বেকারের ৪১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরি হলো, সব যোগ্যতা রয়েছে। তারপরও সপ্তাহে ৭ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছেন। অর্থাৎ, যোগ্যতা ও চাহিদা অনুসারে কাজ করতে পারছেন না। এমন মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬১ হাজার, যার মোট বেকারের ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এই ক্যাটাগরির উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, একজন স্নাতক পাস শিক্ষার্থী টিউশনি করছেন। সপ্তাহে ৬ ঘণ্টা কাজ করছেন। কিন্তু, তাঁর যোগ্যতা রয়েছে ৪৮ কিংবা ৫৬ ঘণ্টা কাজ করার।
তৃতীয় ক্যাটাগরি হচ্ছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে, কিন্তু চাকরি খুঁজছেন না। কিংবা চাকরি খুঁজছেন, কিন্তু চাকরির জন্য অতিরিক্ত যোগ্যতা প্রয়োজন, যা তাঁর নেই। এ রকম বেকারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭১ হাজার, যা মোট বেকারের ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে কর্মসংস্থানহীন অর্থনীতির অগ্রগতি হয়েছে। এই সময়ে দেশের বিনিয়োগের পরিবর্তে টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এ কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি। এ কারণে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে।
বিবিএসের এই জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেকার মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা। এরপরই রয়েছে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্নকারী এবং প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনো। বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম অশিক্ষিতদের মধ্যে। অর্থাৎ, যাঁরা পড়াশোনা করেননি, তাঁদের মধ্যে বেকার মানুষ কম।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনীতি ঢুকেছে, ফলে দিন দিন শিক্ষার মান কমছে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব এবং কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষিত বেকার বাড়ছে।
বিবিএসের জরিপের তথ্যমতে, ৬২ লাখ ৫৭ হাজার মানুষের মধ্যে শিক্ষিত বেকার ৫৪ লাখ ১৭ হাজার। আর অশিক্ষিত বেকার ৮ লাখ ৪০ হাজার।
শিক্ষিত বেকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করে বেকার হয়েছেন ১৩ লাখ ২৮ হাজার, মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাস করে বেকার ২০ লাখ ৫ হাজার, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় পাস করে বেকার ৭ লাখ ৭০ হাজার এবং স্নাতক পাস করে বেকার ১৩ লাখ ১৪ হাজার।
বিপরীতে এর মধ্যে অক্ষরজ্ঞানহীন ৭৬ হাজার মানুষ বেকার হয়েছেন। স্বাক্ষর জানেন তবে স্কুলের আঙিনায় পা রাখেননি—এমন মানুষের সংখ্যা ৭ লাখ ৬৪ হাজার।
অশিক্ষিতদের তুলনায় শিক্ষিতরা বেকার বেশি। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশই বেকার।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক এস এম জুলফিকার আলী বলেন, নারী ও গ্রামের শিক্ষার্থীর মধ্যে বেকারত্বের হার তুলনামূলক বেশি। তিনি বলেন, সারা দেশের কলেজগুলোর মানের ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার অভাব এবং চাকরির বাজারমুখী শিক্ষার অভাব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া গ্রামীণ অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
দেশের সবচেয়ে বেশি কর্মক্ষম বা উৎপাদনশীল মানুষ হলেন তরুণেরা। জরিপে বলা হয়, ২০২৩ সালে প্রায় ৬৩ লাখ বেকার মানুষের মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ বয়সী ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার তরুণ। ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ২৩ লাখ ৫১ হাজার মানুষ এবং ৬৫ বছর বয়সী ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ বেকার হয়েছেন। অর্থাৎ মোট বেকারের তিন ভাগের দুই ভাগই তরুণ।
অপরদিকে ২০২৩ সালের ৬২ লাখ ৫৭ হাজার বেকার মানুষের মধ্যে পুরুষ বেকার ৩৩ লাখ ৬২ হাজার। আর নারী বেকার ২৮ লাখ ৯৫ হাজার জন। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের বেকার ছিল ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ছিল ৪০ লাখ আর নারী ছিল ২৭ লাখ ৬০ হাজার। গ্রাম ও শহর উভয় এলাকায় মহিলার তুলনায় পুরুষেরা বেশি বেকার ছিলেন।
এ বিষয়ে পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় পোশাক খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বড় পদে চাকরি করছেন ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান নাগরিকেরা। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে তার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি(LIVE) দেখুন
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি ফ্রিতে সরাসরি(LIVE) দেখুন
- আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় টি-টোয়েন্টি: যেভাবে দেখবেন লাইভ (LIVE)
- ডিএসই’র দুই ব্রোকারেজের ট্রেডিং লাইসেন্স বাতিল
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৯৫ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় টি-২০: কবে, কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন খেলাটি
- আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ: কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন সরাসরি(LIVE)
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ৬৮ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- মার্জিন রুল থেকে মিউচুয়াল ফান্ড—সবখানেই আসছে বড় পরিবর্তন
- দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম পাকিস্তান, খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখুন
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে অগ্নী সিস্টেমস
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে তালিকাভুক্ত২৪ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে সিমটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে জেএমআই হসপিটাল
- নেগেটিভ ইকুইটি মুক্ত করতে মার্জিন ঋণে তালা মারছে বিএসইসি