ঢাকা, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আবারও রাস্তায় নামব: ডাকসু ভিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক

ডুয়া নিউজ

২০২৫ নভেম্বর ১৫ ১৯:২৯:০২

কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আবারও রাস্তায় নামব: ডাকসু ভিপি

বাংলাদেশে কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো আবারও রাস্তায় নামতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সাদিক কায়েম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, "আজ আমরা শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ভুলে যাচ্ছি, ছাত্রসংগঠনগুলোতে দেখা দিচ্ছে দাম্ভিকতা— তাই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারি রাখার আহ্বান জানাই।" সাদিক কায়েম অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো আজ ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলছে এবং তাদের দোসররা এখনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, "ইসলামী ছাত্রশিবির আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না— বাংলাদেশে কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আমরা জুলাইয়ে যেমন রাস্তায় নেমেছি, আবারও ঠিক একইভাবে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। মানুষের আজাদীর লড়াই ইসলামী ছাত্রশিবির কিয়ামত পর্যন্ত চালিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।" অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার আহ্বান, "খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে, আর ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেখানে পাওয়া যাবে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে, কারণ তারা রাজনৈতিক দল নয়— তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।"

সাদিক কায়েম জুলাই বিপ্লবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল জনগোষ্ঠী সে সময় শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশে ৩০ জুলাই সবচেয়ে বড় মিছিলটি হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার রাবির ভাইয়েরা সেদিন সকল বাধাকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নামার পরেই দেশের সকলে রাস্তায় নেমেছিল।"

তিনি উল্লেখ করেন, "জুলাই বিপ্লবে রাজশাহী মহানগরের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ আলী রায়হান ভাইও শহীদ হয়েছিলেন। এই ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহীর সমগ্র মানুষের অগ্রণী ভূমিকা আমরা দেখেছি।" তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে খুনি হাসিনা, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও তার দোসররা বাংলাদেশের প্রতিটা ক্যাম্পাসে একটি কনসেনট্রেট ক্যাম্প তৈরি করেছিল, যেখানে গণরুম-গেস্টরুম কালচারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হতো এবং ইসলাম চর্চাকারীদের ট্যাগিং করা হতো। তিনি জানান, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেলেও, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মুক্তি আসেনি।

অনুষ্ঠানে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেদিন তাদের চার ভাই শহীদ হয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর থেকে প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির 'শহীদ দিবস' পালন করে। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, "সেই দিন আজ পাল্টে গেছে। এই নবীনবরণ করতে গিয়ে আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, আর আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারছি— এজন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।" তিনি জানান, ১৯৮২ সালের পর আজই প্রথম ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বড় নবীনবরণের আয়োজন করা হলো, যেখানে বোনেরাও অংশ নিতে পেরেছেন।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের নবীনবরণ সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ। এরপর প্রায় সাড়ে চার দশক পর এটি ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হলো।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম এবং চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি। প্রধান আলোচক ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্যান্য সংবাদ