ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

রাকসু নির্বাচন

প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের দ্বিধা, কতটা বাস্তবসম্মত?

২০২৫ অক্টোবর ১৩ ২০:৪৩:০৫

প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের দ্বিধা, কতটা বাস্তবসম্মত?

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ এবং সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন-২০২৫ কে ঘিরে ক্যাম্পাস এখন সরগরম। আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের মাত্র দুই দিন বাকি থাকায় প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত, দিচ্ছেন নানা রকম বড় বড় প্রতিশ্রুতি। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে, দীর্ঘদিনের স্থায়ী সমস্যাগুলোর বাস্তবসম্মত সমাধান না হলে এসব ইশতেহার শুধুই কথার ফুলঝুরি হয়ে থাকবে।

রাকসুর বিভিন্ন প্যানেল ইতিমধ্যেই তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল গতকাল তাদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে। ঘোষিত ইশতেহারগুলোতে প্রার্থীরা আবাসন সংকট, খাবার ও সুপেয় পানির অভাব, চিকিৎসা অব্যবস্থা, একাডেমিক জটিলতা, লাইব্রেরি ও ল্যাবের সীমাবদ্ধতা, নিরাপত্তাহীনতা, পরিবহন সমস্যা, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের প্রসারের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ইশতেহারে কিছু বৈচিত্র্যও দেখা গেছে। তারা ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার শাহাদাত দিবসকে 'জাতীয় শিক্ষক দিবস' হিসেবে ঘোষণার দাবি তুলেছে। পাশাপাশি বিবাহিত শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসিক হল নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। প্যানেলটির ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েই তারা ইশতেহার সাজিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতিগুলো অসম্ভব নয়। নির্বাচিত হলে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অল্প সময়েই এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব বলে তিনি আশাবাদী।

শিবির সমর্থিত প্যানেল 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট' সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইশতেহার দিয়েছে, যেখানে তারা ১২ মাসে ২৪টি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্যানেল শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ, আবাসন সংকট নিরসন, মানসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ ক্যাম্পাস, তথ্যসেবা ও আধুনিকায়ন, সুসম্পর্ক বৃদ্ধি এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণকে ‘হ্যাঁ’ বলেছে। অন্যদিকে, ৫০ টাকা হল ফি, হল দখল ও সিট-বাণিজ্য, ট্যাগিং ও ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি, স্লাট শেমিং-সাইবার বুলিং ও শারীরিক নির্যাতন, ধর্মবিদ্বেষ, মাদক ও ছিনতাই, সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে ‘না’ বলেছে। প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ জানান, এই ২৪টি সংস্কার এক বছরের মধ্যে সম্ভব এবং আরও কিছু কাজ করার সুযোগ থাকবে।

বামপন্থী ছাত্রসংগঠন সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলের ইশতেহারে রাকসুর কাঠামো সংস্কার, ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, তারা রাকসুকে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণের একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখেন এবং নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্যসংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে কাজ করবেন।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিগুলোতে নতুন কিছু নেই এবং এসব বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাফায়েল মারুফ বলেন, অনেক প্রার্থী গঠনতন্ত্রের সীমা ছাড়িয়ে এমনসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যা বাস্তবসম্মত নয় এবং শুধুই ভোট পাওয়ার কৌশল। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, রাকসু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন হওয়ায় এর ক্ষমতা সীমিত। তবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এটি একটি কার্যকর প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি সেশনজটকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে এর সমাধানে রাকসুর চাপ প্রয়োগের ওপর জোর দেন এবং বিবাহিতদের জন্য হল নির্মাণের দাবিকে অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মোট ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন: রাকসুতে ২৪৮ জন, সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন এবং ১৭টি আবাসিক হল সংসদে ৫৯৭ জন। আগামী ১৬ অক্টোবর একযোগে ভোটগ্রহণ শেষে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত