ঢাকা, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২

'সরকারি বেতন বৃদ্ধি ও নির্বাচনি ব্যয় বাড়াতে পারে মুদ্রাস্ফীতি'

২০২৫ অক্টোবর ০৬ ০১:৫৫:০৪

'সরকারি বেতন বৃদ্ধি ও নির্বাচনি ব্যয় বাড়াতে পারে মুদ্রাস্ফীতি'

নিজস্ব প্রতিবেদক: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। যেখানে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ১.৫ শতাংশে, নেপালে ৫.২ শতাংশে এবং পাকিস্তানে ৫.৬ শতাংশে, সেখানে বাংলাদেশে এটি এখনও ৮ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.২৯ শতাংশ, যার মধ্যে খাদ্য খাতে এই হার ৯.৩ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৭.১ শতাংশ। চাল, তেল ও ডিমের দাম স্থিতিশীল থাকলেও শাকসবজি, মাংস ও দুধজাত পণ্যের উচ্চমূল্য সামগ্রিক সূচকে চাপ সৃষ্টি করেছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারের বাজার তদারকি ও খাদ্য মজুত বাড়ানোর উদ্যোগ কিছুটা ফল দিলেও, কাঠামোগত ব্যয়বৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রকাশিত 'এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক' প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭ শতাংশ, যা অন্তত ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ। এডিবি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দিলেও সতর্ক করেছে যে, এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ হারই থাকবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় কঠোরতা দেখাতে দেরি করেছে, যার ফলে "টু লিটন, টু লেট" পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তার মতে, মুদ্রানীতির পাশাপাশি সরবরাহ-পক্ষের দুর্বলতা, আমদানি-নির্ভরতা এবং টাকার অবমূল্যায়নও দাম বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত টাকার মান মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, যা আমদানি-নির্ভর পণ্যের দাম বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিরুপাক্ষ পাল একে ‘নীতিগত দ্বৈততা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, একদিকে সুদের হার বাড়িয়ে মুদ্রা সঙ্কোচনের নীতি নেওয়া হচ্ছে, আবার অপরদিকে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট মেটাতে টাকা ছাপানো হচ্ছে, যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াচ্ছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগে স্থবিরতাও মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রেখেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, টাকার অবমূল্যায়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রভাব ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও দাম বাড়াতে পারে। সিপিডির ড. ফাহমিদা খাতুনও মনে করেন, সরকারি কর্মচারীদের সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধি এবং নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের অতিরিক্ত ব্যয় মুদ্রাস্ফীতিকে আবারও চাঙা করে তুলতে পারে।

তুলনামূলকভাবে, ভারতে আগস্ট মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ২.০৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। দেশটির উৎপাদনশীল কৃষি নীতি, যথাযথ ভর্তুকি এবং কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলঙ্কা কঠোর মুদ্রানীতি ও বাজেট ঘাটতি কমিয়ে ১.৫ শতাংশে মুদ্রাস্ফীতি নামিয়ে এনেছে, যা একটি আশাব্যঞ্জক অবস্থান।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত