ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ন্যাশনাল ব্যাংককে বিকল্প পথে তারল্য সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ০৩ ২৩:২৮:১৫
ন্যাশনাল ব্যাংককে বিকল্প পথে তারল্য সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংককে নতুন করে ১ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০ শতাংশ সুদে ৯০ দিনের জন্য এই অর্থ ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে দেওয়া হয়েছে, কারণ ব্যাংকটির কাছে প্রচলিত পদ্ধতিতে টাকা ধার নেওয়ার জন্য কোনো বন্ড ছিল না। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যত টাকা ছাপিয়ে এই অর্থ সরবরাহ করতে হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সোমবার (০২ জুন) এই লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রোববার ন্যাশনাল ব্যাংক তারল্য সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন বিনা জামানতে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের অনুমোদন নিয়ে এই তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়। এ নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে মোট ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আগের নেওয়া ধারের অর্থের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ব্যাংক তা পরিশোধ করতে পারেনি, যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও তিন মাস সময় বাড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে ঋণের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই অর্থ থেকে নিজ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কোনো পরিচালক এবং তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণ, কিংবা তাদের নামে বা বেনামে রাখা আমানতের অর্থ পরিশোধ করা যাবে না। এই অর্থ অন্য ব্যাংকে আন্তঃপ্লেসমেন্ট বা আমানত অথবা সিকিউরিটিজ কেনার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে না।

এছাড়াও, ধারের টাকায় ব্যাংকের বিদ্যমান অন্যান্য দায় ও আন্তঃব্যাংক দায় এবং পরিচালন ব্যয় চালানো যাবে না। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই অর্থ দিয়ে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না এবং অপ্রয়োজনীয় ও অতিরঞ্জিত ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি, ঋণের অর্থ দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণ দেওয়া, এলসির দায় পরিশোধ বা অন্য উদ্দেশ্যে ডলার কেনা এবং অন্য ব্যাংকের ঋণ অধিগ্রহণ করাও নিষিদ্ধ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা ইস্যুকে ‘মানি প্রিন্টিং’ বা ‘টাকা ছাপানো’ বলা হয়। তবে এই ছাপানোর অর্থ কাগুজে নোট ছেপে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয় না। এর পরিবর্তে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা স্থানান্তর করে, এবং ব্যাংকগুলো সমপরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিতে বা প্রয়োজনে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বরাবরই টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়ে আসছেন, কারণ এটি মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে। যদিও গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে ধার না দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তবে গত মার্চে তিনি তার অবস্থান বদলে জানান যে, প্রয়োজন হলেই দুর্বল ব্যাংককে টাকা দেওয়া হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আবার টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সাংঘর্ষিক কি-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, "আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করতে চাই না। এটা ভালো বার্তা নয়। মার্জার আইন করা হয়েছে যাতে দুর্বল ব্যাংককে টিকিয়ে রাখা যায়। আইন বাস্তবায়নের আগে কিছুটা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে যাতে আমানতকারীরা আস্থা না হারায়। বিষয়টি অবশ্যই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।"

ন্যাশনাল ব্যাংককে শুধু টাকা ছাপিয়ে নয়, বিকল্প পন্থায়ও তারল্য সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে চলতি হিসাবের ঘাটতি পূরণে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা এবং গ্যারান্টি বাবদ ৯৮৫ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকটিকে।

বহুল আলোচিত সিকদার পরিবার ও এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে নানা আর্থিক অনিয়মে জড়ানোর পর, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির পর্ষদ বাতিল করে এবং নতুন পর্ষদ গঠন করে।

আর্থিক দুরবস্থার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সাল শেষে ন্যাশনাল ব্যাংক ১ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যা আগের বছরের (২০২২ সালের) তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বা ২০৯ কোটি টাকা বেশি। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ব্যাংকটি এককভাবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোকসান করেছিল।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত