ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

কোরআনের প্রেরণায় যেভাবে বিশ্ববিজ্ঞান নেতৃত্ব দেয় মুসলমানরা

২০২৫ অক্টোবর ১২ ১৪:১৮:১৭

কোরআনের প্রেরণায় যেভাবে বিশ্ববিজ্ঞান নেতৃত্ব দেয় মুসলমানরা

ডুয়া ডেস্ক: মানবসভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের অবদান যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই অগ্রযাত্রার পেছনে মুসলিম বিজ্ঞানীদের ভূমিকা ততটাই গভীর ও অনস্বীকার্য। কোরআনের প্রেরণায় জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও সৃষ্টিশীলতার যে ধারা গড়ে ওঠে, তা-ই ইসলামি স্বর্ণযুগের ভিত্তি স্থাপন করে। নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়টিতে মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারকে এমনভাবে সমৃদ্ধ করেন, যার প্রভাব আজও আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দৃশ্যমান।

ফরাসি চিকিৎসাবিদ ড. মরিস বুকাইলি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান’-এ উল্লেখ করেছেন, “কোরআনে এমন কোনো বক্তব্য নেই, যা আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।” প্রকৃতপক্ষে, কোরআনের গবেষণামুখী আহ্বানই মুসলিম বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানচর্চার দিকে উদ্বুদ্ধ করে এবং বিশ্ববিজ্ঞানকে দেয় এক নতুন দিকনির্দেশনা।

রসায়নে মুসলমানদের বৈপ্লবিক অবদান

রসায়নের শাস্ত্র প্রকৃত অর্থেই মুসলমানদের হাত ধরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানে পরিণত হয়। নবী করিম (সা.)–এর যুগ থেকে শুরু করে খলিফা আলী (রা.), খালেদ বিন ইয়াজিদ ও ইমাম জাফর সাদিক পর্যন্ত রসায়নের প্রাথমিক ভিত্তি রচিত হয়। তবে এই ধারাকে পূর্ণতা দেন জাবির ইবনে হাইয়ান—যাকে বলা হয় “রসায়নের জনক”। তিনি প্রথমবারের মতো গলন, স্ফুটন, পাতন ও স্ফটিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার নীতি ব্যাখ্যা করেন। ঐতিহাসিক আমির আলির ভাষায়, “রসায়ন একটি বিজ্ঞান হিসেবে মুসলমানদেরই আবিষ্কার।”

আলোর রহস্য ও পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লব

ইবনে হাইসাম বা আলহাজেন আলোকবিজ্ঞানের জনক হিসেবে খ্যাত। তার লেখা ‘কিতাব আল-মানাজির’ গ্রন্থে তিনি প্রথমবার আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলনের সঠিক ব্যাখ্যা দেন এবং আধুনিক ক্যামেরার ধারণা “ক্যামেরা অবস্কিউরা” প্রবর্তন করেন। অপরদিকে ইবনে সিনা পদার্থ ও শক্তি বিষয়ে এমন তত্ত্ব দেন, যা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের সোনালি অধ্যায়

ইসলামের প্রারম্ভিক যুগ থেকেই চিকিৎসাকে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে দেখা হতো। নবী করিম (সা.) যুদ্ধকালীন সময়ে চিকিৎসা শিবির স্থাপন করেন এবং রোগীদের সেবায় উৎসাহ দেন। পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেদার সময় চিকিৎসা শিক্ষা, ওষুধ গবেষণা ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা হয়।ইবনে সিনার ‘আল-কানুন ফি আত-তিব্ব’ শতাব্দীর পর শতাব্দী ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পাঠ্য ছিল। আবুল কাসেম আজ-জাহরাবি অস্ত্রোপচারের জনক হিসেবে পরিচিত, আর ইবনে নাফিস রক্ত সঞ্চালনের তত্ত্ব আবিষ্কার করেন—যা আধুনিক শারীরবিদ্যার এক ভিত্তিপ্রস্তর।

জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের নবদিগন্ত

আল-ফারাবির আবিষ্কৃত অ্যাস্ট্রোল্যাব ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিপ্লবী যন্ত্র। মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি ‘আল-জাবর ওয়াল মুকাবিলা’ গ্রন্থে বীজগণিতকে নতুন রূপ দেন। তার নাম থেকেই “অ্যালগারিদম” শব্দের জন্ম। আল-খারেজমির উদ্ভাবিত শূন্য ধারণা আধুনিক গণিতকে দেয় নতুন গতি। আবুল ওয়াফা ও ওমর খৈয়াম ত্রিকোণমিতি ও জ্যামিতির সূত্র বিকাশ করে গণিতকে করে তাত্ত্বিকভাবে আরও শক্তিশালী।

সমরকৌশল ও প্রযুক্তিতে মুসলিম অবদান

নবী করিম (সা.) যুদ্ধের কৌশল, শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক সেনা পরিচালনার ভিত্তি স্থাপন করেন। ওমর (রা.)-এর আমলে সৈন্যদের জন্য নিয়মিত বেতন ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রবর্তিত হয়। উমাইয়া যুগে মুসলমানরা প্রথম কামান বা ‘মিনজানিক’ ব্যবহার করে দুর্গ দখলে সাফল্য দেখায়। এভাবেই সামরিক প্রযুক্তি ও সংগঠনে মুসলমানরা পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে এগিয়ে যায়।

ইসলামী বিজ্ঞানের উত্তরাধিকার ও প্রভাব

বাগদাদের ‘বাইতুল হিকমা’ বা হাউস অব উইজডমে গড়ে ওঠা অনুবাদ আন্দোলন গ্রীক, ভারতীয় ও পারস্য জ্ঞানের সঙ্গে ইসলামী চিন্তার সংমিশ্রণ ঘটায়। এই আন্দোলনের ফলেই ইউরোপে জন্ম নেয় রেনেসাঁ। মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান শুধু ইতিহাস নয়—এটি মানবসভ্যতার স্থায়ী ঐতিহ্য, যা আজও আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় জীবন্ত হয়ে আছে।

এমজে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের বাজারে আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি... বিস্তারিত