ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২
জেনে নিন জমি পরিমাপের সহজ সমাধান-সহ প্রয়োজনীয় নানা তথ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক: জমি পরিমাপ সবসময়ই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ একটি কাজ। তবে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে এই কাজ হতে পারে অনেক সহজ ও নির্ভুল। প্রাচীনকাল থেকেই ভূমি জরিপে ব্যবহৃত হচ্ছে গান্টারের শিকল, যা দিয়ে একর, শতক কিংবা মাইলস্টোন নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নির্ভরযোগ্যভাবে। সহজ ভাষায় জমি মাপার এই পদ্ধতি এখনো দেশে বহুল ব্যবহৃত ও কার্যকর।
ইঞ্চি, ফুট ও গজ
১২ ইঞ্চি = ১ ফুট,৩ ফুট = ১ গজ
ভূমি যে কোন সাইজের অর্থাৎ কোন ভূমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয়, তাহলে এটা ১.০০ একর (এক একর) হবে।যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০ গজ × ২২ গজ = ৪৮৪০ বর্গগজ ।
কাঠা, বিঘা ও একর
১ কাঠা = ১৬ ছটাক,১ কাঠা = ১৬৫ অযুতাংশ,১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ,১ শতাংশ = ১০০ অযুতাংশ,২০ (বিশ) কাঠা = ১ বিঘা,১.০০ একর = ১০০ শতাংশ= ৩.০৩০৩০৩০৩... বিঘা।একশত শতাংশ বা এক হাজার সহস্রাংশ বা দশ হাজার অযুতাংশ= ১.০০ (এক) একর। দশমিক বিন্দুর (.) পরে চার অঙ্ক হলে অযুতাংশ পড়তে হবে।
শতাংশ ও একর
৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর,৪৩৫৬০ বর্গফুট= ১ একর,১৬১৩ বর্গগজ= ১ বিঘা,১৪৫২০বর্গফুট= ১ বিঘা,৪৩৫.৬০ বর্গফুট= ০১ শতাংশ,৮০.১৬ বর্গগজ= ১ কাঠা,৭২১.৪৬ বর্গফুট= ১ কাঠা,৫.০১ বর্গগজ = ১ ছটাক,৪৫.০৯ বর্গফুট= ১ কাঠা,২০ বর্গহাত = ১ ছটাক,১৮ ইঞ্চি ফুট= ১ হাত (প্রামাণ সাই)
মিলিমিটার ও ইঞ্চি
১ মিলিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়),১ সেন্টিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়),১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি বা ৩.২৮ ফুট/ ১.০৯৩ গজ (প্রায়),১০০০ মিটার = ১ কিলোমিটার,১ কিলোমিটার= ১১ শত গজ,২ কিলোমিটার = (সোয়া মাইল),১৭৬০ গজ = ১ মাইল,১৩২০ গজ = পৌন এক মাইল,৮৮০ গজ = আধা মাইল,৪৪০ গজ = পোয়া মাইল,১ বর্গ মিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট (প্রায়),১ হেক্টর = ২.৪৭ একর (প্রায়),১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার (প্রায়)
গান্টার শিকল
ভূমি পরিমাপকে সহজ ও নির্ভুল করার জন্য ফরাসি বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা একটি বিশেষ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। জমি মাপার কাজে তিনি ইস্পাত দিয়ে তৈরি এক ধরনের শিকল তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে তাঁর নাম অনুসারে পরিচিত হয় ‘গান্টারের শিকল’ নামে।
বাংলাদেশে জমি জরিপে গান্টারের শিকলের ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলিত। একর, শতক নির্ধারণ কিংবা মাইলস্টোন বসানোর ক্ষেত্রে এই শিকলকে অত্যন্ত কার্যকর ধরা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০.৩১ মিটার বা ৬৬ ফুট।
গান্টার শিকল ভূমি পরিমাপের সুবিধার্থে একে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় থাকে। এর প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
প্রতি এক লিঙ্ক = ৭.৯২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ১০ চেইন ×প্রস্থে ১ চেইন = ১০ বর্গ চেইন = ১ একর গান্টার শিকলে ১০ লিঙ্ক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পর পর নস বা ফুলি স্থাপন করা হয় (নস ফুলি)।
২০ লিঙ্ক বা ১৫৮.৪ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়- ৩০ লিঙ্ক বা ২৩৭.৩ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়- ৪০ লিঙ্ক বা ৩১৬.৮ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়- ৫০ লিঙ্ক বা ৩৯৬.০ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়- ৮০ গান্টার বা ১৭৬০ গজ পর স্থাপিত হয়- মাইল ষ্টোন।
একর শতকে ভূমির মাপ
১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল ১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর
আমাদের দেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমাণ বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনক।
আঞ্চলিক পরিমাপ
আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারের মাপ ঝোক প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি। অঞ্চলে ভেদে এই পরিমাপগুলো আয়তন বিভিন্ন রকমের হয়ে তাকে। বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির পরিমাপ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হলেও সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর, শতক পদ্ধতিতে করা হয়। সারাদেশে একর শতকের হিসাব সমান।
কানিঃ কানি দুই প্রকার। যথা- (ক) কাচ্চা কানি (খ) সাই কানি
কাচ্চা কানি: ৪০ শতকে এক বাচ্চা কানি। কাচ্চা কানি ৪০ শতকে হয় বলে একে ৪০ শতকের কানিও বলা হয়।
সাই কানিঃ এই কানি কোথাও ১২০ শতকে ধরা হয়। আবার কোথাও কোথাও ১৬০ শতকেও ধরা হয়।
কানি গন্ডার সাথে বিভিন্ন প্রকারের পরিমাপের তুলনাঃ
২ কানি ১০ গন্ডা (৪০ শতকের কানিতে) = ১ একর ,১ কানি = ১৭২৮০ বর্গফুট ,১ কানি = ১৯৩৬ বর্গগজ ,১ কানি = ১৬১৯ বর্গমিটার ,১ কানি = ৪০ বর্গ লিঙ্ক,১ একর = ১০ বর্গ চেইন,১ একর = ১০০ শতক ,১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার ,১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক ,১ একর = ৬০.৫ কাঠা ,১ শতক = ১/২ গন্ডা বা ৪৩২.৬ বর্গফুট।বিঘা এবং কাঠা১ বিঘা = (৮০ হাত×৮০ হাত) ৬৪০০ বর্গহাত,১ বিঘা = ২০ কাঠা,১ কাঠা = ১৬ ছটাক,১ ছটাক = ২০ গন্ডা,১ বিঘা = ৩৩,০০০ বর্গলিঙ্ক,১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট,১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট,১ ছটাক = ৪৫ বর্গফুট।
লিঙ্ক এর সাথে ফুট ও ইঞ্চির পরিবর্তনঃ
লিঙ্ক = ৭.৯ ইঞ্চি,৫ লিঙ্ক = ৩ ফুট ৩.৬ ইঞ্চি,১০ লিঙ্ক = ৬ ফুট ৭.২ ইঞ্চ,১৫ লিঙ্ক = ৯ ফুট ১০.৮ ইঞ্চি,২০ লিঙ্ক = ১৩ ফুট ২.৪ ইঞ্চি,২৫ লিঙ্ক = ১৬ ফুট ৬.০ ইঞ্চি,৪০ লিঙ্ক = ২৬ ফুট ৪.৮ ইঞ্চি,৫০ লিঙ্ক = ৩৩ ফুট,১০০ লিঙ্ক = ৬৬ ফুট
একর-হেক্টর
১ হেক্টর = ১০,০০০ বর্গমিটার১ হেক্টর = ২.৪৭ একর১ হেক্টর = ৭.৪৭ বিঘা১ হেক্টর = ১০০ একর।
খতিয়ান (Record of Rights)
খতিয়ানে জমির মালিকানা ও বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। এতে খতিয়ান নম্বর, জেলা ও মৌজার নাম উল্লেখ থাকে। পাশাপাশি একাধিক কলামে জমির মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, দাগ নম্বর (Plot No.), জমির শ্রেণী ও পরিমাণ ইত্যাদি লেখা হয়। একটি খতিয়ানে কোনো একজন মালিকের জমির তথ্য থাকতে পারে, আবার একই খতিয়ানে একাধিক মালিকের জমির বিবরণও থাকতে পারে। খতিয়ান সাধারণত মৌজা ভিত্তিক তৈরি হয়। একটি মৌজার সব খতিয়ান একত্রে বাঁধাই করা অবস্থায় থাকে, যা প্রচলিতভাবে “ভলিউম” নামে পরিচিত।
পড়চা (Porcha)
খতিয়ানের তথ্য আলাদা কাগজে নকল বা অনুলিপি আকারে প্রস্তুত করা হলে তাকে পড়চা বলা হয়। এটি হাতে লেখা বা কম্পোজ করা হতে পারে। রেকর্ড রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকলে সেটিই হয় আসল নকল বা Certified Copy। সহজভাবে, পড়চা হলো খতিয়ানের কপি বা খসড়া।
আমরা সিএস, এসএ ও আরএস পড়চা শুনে থাকি। এগুলো আসলে বিভিন্ন জরিপ রেকর্ডের অনুলিপি। জরিপ চলাকালে মালিককে যাচাইয়ের জন্য হাতে লেখা খসড়া পড়চা দেওয়া হয়, যাকে মাঠ পড়চা বা হাত পড়চা বলা হয়।
পড়চা সংগ্রহের স্থান
জেলার প্রশাসকের কার্যালয়ের (ডিসি অফিস) রেকর্ড রুম থেকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পড়চা সংগ্রহ করা যায়। কখনো দালালের মাধ্যমে সংগ্রহ না করাই ভালো, কারণ সেখানে ভুল থাকার ঝুঁকি থাকে। শুধুমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত পড়চাই আসল।
পড়চার গুরুত্ব
জমির মালিকানা, দাগ-খতিয়ান নম্বর, অংশ, হিস্যা ও জমির শ্রেণী সম্পর্কে জানতে পড়চা অপরিহার্য। বিশেষ করে জমি কেনা-বেচার সময় পড়চা যাচাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস বা জেলা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করা যায়।
মৌজা (Mouza)
জরিপকালে একই ভৌগোলিক প্রকৃতির স্বতন্ত্র এলাকা আলাদাভাবে মাপজোক করা হয়। থানাভিত্তিক এই একককে মৌজা বলা হয়। কয়েকটি গ্রাম মিলে একটি মৌজা হতে পারে, আবার একটি গ্রামে একাধিক মৌজাও থাকতে পারে। প্রতিটি মৌজা উপজেলা ভিত্তিক একটি ক্রমিক নম্বর (JL নম্বর) দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়। ভূমি ব্যবস্থাপনায় মৌজা একটি গুরুত্বপূর্ণ একক।
তফসিল (Schedule)
তফসিল হলো জমির সুনির্দিষ্ট পরিচয়। এতে জেলা, উপজেলা/থানা, মৌজার নাম, দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর উল্লেখ থাকে। পাশাপাশি জমির পরিমাণ, শ্রেণী ও মালিকানা সম্পর্কিত তথ্যও লেখা হয়।
দাগ নম্বর (Plot Number)
জমিকে জরিপের সময় বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ করা হয়। প্রতিটি খণ্ডকে দাগ বা Plot বলা হয়। প্রতিটি দাগের জন্য আলাদা নম্বর নির্ধারণ করা হয়, যা দাগ নম্বর নামে পরিচিত।
মৌজা ম্যাপ
খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ মিলেই জমির পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড তৈরি হয়। শুধুমাত্র খতিয়ান দেখে জমি শনাক্ত করা সম্ভব নয়, এজন্য মৌজা ম্যাপ প্রয়োজন। এতে দাগ নম্বরের মাধ্যমে জমি নির্ধারণ করা যায় এবং রাস্তা, স্কুল, মসজিদ, পুকুর, ঈদগাহসহ অন্যান্য পাবলিক প্রপার্টিও চিহ্নিত থাকে। এটি ডিসি অফিসের রেকর্ড রুম থেকে সংগ্রহ করা যায়।
এওয়াজ বদল (Exchange of Land)
ব্যবহারিক সুবিধার্থে অনেক সময় জমির মালিকেরা পারস্পরিক সমঝোতায় নিজেদের জমির দখল বিনিময় করেন। একে এওয়াজ বদল বলা হয়। তবে এতে মালিকানা বদল হয় না, কেবল দখল বদল হয়। মালিকানা হস্তান্তরের জন্য অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনাল: কবে, কখন-যেভাবে দেখবেন লাইভ
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি ফ্রিতে সরাসরি(LIVE) দেখুন
- পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখবেন যেভাবে
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৯৫ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় টি-টোয়েন্টি: যেভাবে দেখবেন লাইভ (LIVE)
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ৬৮ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- মার্জিন রুল থেকে মিউচুয়াল ফান্ড—সবখানেই আসছে বড় পরিবর্তন
- বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩য় টি-টোয়েন্টি: খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখবেন যেভাবে
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি দেখুন (LIVE)
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ
- ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণার পর শেয়ার দামে রেকর্ড দৌড়
- ইপিএস প্রকাশ করেছে বিএটিবিসি
- আর্জেন্টিনার পরবর্তী ম্যাচ কবে, কখন-কোথায়, দেখুন সময়সূচি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে একমি পেস্টিসাইডস