ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২
ভোটের লড়াইয়ে বিএনপি: ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন: জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি এখন ব্যস্ত সময় পার করছে প্রার্থী বাছাই ও প্রচার কৌশল চূড়ান্ত করার কাজে। ফেব্রুয়ারিতে ভোটের তফসিল ঘোষণার আগেই দলটি প্রায় ২০০ আসনের প্রার্থী ঘোষণা এবং এক মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে চায়। দলের নেতারা বলছেন, এবার তারা সংগঠিতভাবে মাঠে নামতে চান, যাতে ভোটারদের কাছে শক্ত বার্তা পৌঁছানো যায়।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ে ইতোমধ্যে একাধিক অভ্যন্তরীণ জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এলাকা ভিত্তিক সমীক্ষা, প্রার্থীদের সিভি পর্যালোচনা এবং সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা আরও নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করছে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো মনোনয়নে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা। এজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।” তিনি আরও জানান, যাচাই-বাছাই শেষে সব তথ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে। কমিটিই সংসদীয় বোর্ড হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা এবং ঘরে ঘরে প্রচারণা শুরু হবে।
অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা
দলীয় অভ্যন্তরে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ যেন না দেখা দেয়, সে বিষয়ে সরাসরি সতর্কবার্তা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, একক প্রার্থী চূড়ান্ত হলে অন্য কেউ তা মেনে নেবে না—এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এ লক্ষ্যে সংগঠনিক সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যানরা বিভাগভিত্তিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
প্রার্থীদেরও বলা হচ্ছে—দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। তবে একাধিক এলাকায় ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার ও ব্যানার লাগাতে দেখা গেছে, যা হাইকম্যান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বিকল্প প্রার্থী রাখার পরিকল্পনা
জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের সময় অনেকেই নানা কারণে অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন—এটি মাথায় রেখে বিএনপি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ঋণ খেলাপি, কর বকেয়া, আইনি জটিলতা কিংবা চলমান মামলার কারণে অনেক প্রার্থী শেষ মুহূর্তে বাতিল হতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি আসনের জন্য একজনের পাশাপাশি আরও একজনকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে, যাকে প্রয়োজনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া যাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিকল্প প্রার্থী রাখার এ পরিকল্পনার ফলে কোনো আসন ফাঁকা থাকার ঝুঁকি থাকবে না। বরং সংকট দেখা দিলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিকল্প প্রার্থীকে সামনে আনা সম্ভব হবে। এতে করে নির্বাচন ঘিরে দলের প্রচারণায় কোনো ভাটা পড়বে না, বরং মাঠপর্যায়ে সংগঠন আরও চাঙ্গা থাকবে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এ উদ্যোগ শুধু দলের প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে না, বরং প্রতিপক্ষের সামনে তাদের কৌশলগত সক্ষমতাও প্রদর্শন করবে।
জোট ও আসন ভাগাভাগি
বিএনপি তাদের মিত্র দলগুলোর সঙ্গেও আসন ভাগাভাগির আলোচনায় বসেছে। দলীয় সূত্র বলছে, অন্তত ৫০ আসন জোটের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে বৃহত্তর জোট গঠিত হলে আরও আসন ছাড়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এজন্য প্রথম ধাপে ২০০ আসনের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হবে।
গত বছর বিএনপি তাদের স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিল কয়েকজন মিত্র দলের শীর্ষ নেতাকে সমর্থন করতে। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকার দুটি আসনে—অ্যান্ডালিভ রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭) ও ববি হাজ্জাজকে (ঢাকা-১৩)—সমর্থনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
পূর্ববর্তী নির্বাচনের অভিজ্ঞতা
নির্বাচনী ইতিহাসে বিএনপির অভিজ্ঞতা মিশ্র। ২০০৮ সালে তারা ৩০ আসন পায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনও তারা বর্জন করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। এবারের নির্বাচনে তাই তারা নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে।
প্রার্থী যাচাইয়ের মানদণ্ড
দলীয় সূত্র জানায়, প্রার্থীদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের প্রার্থীদের পাশাপাশি নতুনদেরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। ত্যাগ, সততা, সাংগঠনিক দক্ষতা, জনপ্রিয়তা এবং আন্দোলনে অবদান—এসব মানদণ্ডে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। জুলাই মাসের গণআন্দোলনের পর যেসব নেতা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন, তাদের এবার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রার্থী যাচাইয়ের কাজে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন।
ইশতেহার প্রস্তুতি
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এবারের নির্বাচনী ইশতেহারকে ভিন্নধর্মী ও সময়োপযোগী করে তুলতে চায়। দলটি জানিয়েছে, ইশতেহার তৈরির মূল ভিত্তি হবে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার পরিকল্পনা এবং খালেদা জিয়ার পূর্বে ঘোষিত ভিশন–২০৩০। এর মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা ও স্বপ্নকে প্রতিফলিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র বলছে, এবারের ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, সুশাসন, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা থাকবে ইশতেহারের মূল অঙ্গীকার। একই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি খাতের জন্য থাকবে আলাদা ভিশন, যাতে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা আশার আলো দেখতে পান।
এএসএম/
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনাল: কবে, কখন-যেভাবে দেখবেন লাইভ
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি ফ্রিতে সরাসরি(LIVE) দেখুন
- পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখবেন যেভাবে
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৯৫ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ৬৮ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
- মার্জিন রুল থেকে মিউচুয়াল ফান্ড—সবখানেই আসছে বড় পরিবর্তন
- বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩য় টি-টোয়েন্টি: খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখবেন যেভাবে
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি দেখুন (LIVE)
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ
- ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণার পর শেয়ার দামে রেকর্ড দৌড়
- ইপিএস প্রকাশ করেছে বিএটিবিসি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে একমি পেস্টিসাইডস
- শেয়ারবাজারে ২৭৫ কোটি টাকা আত্মসাত, ৯ বিদেশির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে মনোস্পুল বিডি