ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
ব্যাখ্যা শুনতে ডাকা হচ্ছে শেয়ারবাজারের পাঁচ ব্যাংককে

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে আসছে বড় পরিবর্তন। এরই ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে শেষবারের মতো তাদের ব্যাখ্যা শোনার জন্য ডাকা হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এসব ব্যাংকের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট)কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর সর্বশেষ মূলধন পরিস্থিতি, তারল্য সহায়তা, খেলাপি ঋণ, সিআরআর এবং প্রভিশন ঘাটতির তথ্য নিয়ে শুনানিতে হাজির হতে হবে। একই সঙ্গে কেন তাদের একীভূত করা উচিত নয়, সে ব্যাখ্যাও লিখিত আকারে জমা দিতে হবে।
একীভূত প্রক্রিয়ায় যে ৫টি ব্যাংক রয়েছে— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। তবে এদের মধ্যে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকেই একীভূত হওয়ার বিরোধিতা করে আসছে। গত মঙ্গলবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হকসহ ৯ জন শেয়ারহোল্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার কোটি টাকা মূলধন হিসেবে সরকারকে দিতে হবে, বাকি ১০ হাজার কোটি আসবে আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে ঋণ আকারে। তবে এজন্য সংশোধন করতে হবে বিদ্যমান আমানত বিমা আইন, কারণ বর্তমানে এ তহবিল ট্রেজারি বিল ও বন্ড ছাড়া অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করতে পারে না।
সরকার অনুমোদন দিলে নতুন ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি লাইসেন্স দেবে এবং পরবর্তী সময়ে নিবন্ধন নেবে আরজেএসসি থেকে। প্রাথমিকভাবে এটি সরকারি ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবে। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানা গেছে, মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে নতুন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
নতুন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হবে ইসলামী ব্যাংকিং, আইন, তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্থিক খাতের অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে। পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েই একজন অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবে। শাখা পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়ায় কর্মী ছাঁটাইয়ের ঝুঁকি থাকলেও গ্রামীণ এলাকায় নতুন শাখা খোলার মাধ্যমে তা সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে যে এলাকায় আমানত সংগ্রহ হবে, সে এলাকার বিনিয়োগও অগ্রাধিকার পাবে।
পাঁচ ব্যাংকের আমানত গত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেখানে আমানত ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা, তা নেমে আসে মার্চে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৯ কোটিতে এবং ২০২৫ সালের মে মাসে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকায়। তবে বিপরীতে ঋণস্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩ কোটিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে পাঁচ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ। এর ফলে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকায়।
খেলাপি ঋণের অনুপাতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক (৯৮%), এরপর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (৯৬%), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (৯৫%), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (৬২%) এবং এক্সিম ব্যাংক (৪৮%)। আমানত ফেরত দিতে বিশেষ ধার হিসেবে এক্সিম ব্যাংক নিয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী নিয়েছে ৭ হাজার ৫০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ৬ হাজার ৬৭৫ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ২ হাজার ২৯৫ কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক নিয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
- আইসিবি’র বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি
- কেয়া কসমেটিক্সের ৮ হাজার কোটি টাকা উধাও, চার ব্যাংককে তলব
- সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে শেয়ারবাজারের খান ব্রাদার্স
- ব্লুমবার্গের টেকসই তালিকায় বাংলাদেশের ১১ তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- মূলধন ঘাটতিতে দুই ব্রোকারেজ হাউজ, ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- দুই খবরে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারের চমক
- সাকিবের মোনার্কসহ ৮ ব্রোকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- ২৩ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- চলতি বছর শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্রায়াত্ব দুই প্রতিষ্ঠান
- হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণা, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করল ডিএসই
- বিএসইসির নতুন মার্জিন বিধিমালার খসড়া অনুমোদন
- কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- বিমা আইন সংস্কার: বিনিয়োগ ও আস্থায় নতুন দিগন্ত
- শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর: কমছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদ