ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য মুডি'স'র সতর্কবার্তা

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ আগস্ট ২৬ ০৯:২৫:৫০
বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য মুডি'স'র সতর্কবার্তা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আর্থিক গবেষণা সংস্থা মুডি'স রেটিংসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো একাধিক চ্যালেঞ্জের কারণে চাপের মুখে রয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের প্রভাব এবং আর্থিক প্রতিবেদনসংক্রান্ত নতুন নিয়মকানুন তাদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

মুডি'স জানায়, এই ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক সক্ষমতা এবং সুশাসনের অভাব আমানতকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে, যা তাদের প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করবে। তবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এই খাতের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন যোগাবে বলে সংস্থাটি মনে করে।

তৈরি পোশাক খাতে ঝুঁকির প্রভাব

মুডি'স বলেছে, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি এই খাত থেকে আসে এবং এর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। যেকোনো চূড়ান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও ব্যাখ্যা ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মনোভাবকে প্রভাবিত করবে এবং পুরো তৈরি পোশাক খাতের ভ্যালু চেইন ও রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে।

মুডি'স মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কের কিছু বোঝা বহন করতে হবে। এতে এই খাতের ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে যাবে। মজুরি ও গ্যাস-বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিকারকদের আয় এমনিতেই কমে যাচ্ছে, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঝুঁকি বাড়াবে এবং ফলস্বরূপ ইসলামী ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল করবে।

সুশাসন ও নতুন রিপোর্টিং নিয়ম

ইসলামী ব্যাংক খাত দুর্বল সুশাসন এবং চ্যালেঞ্জিং পরিচালন পরিবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সরবরাহ চেইনে বাধা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো নানা কারণ এর পেছনে কাজ করছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ শ্রেণিকরণের জন্য কঠোর নিয়ম চালু হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকগুলোর খেলাপি বিনিয়োগ (যা প্রচলিত ব্যাংকে এনপিএল বা খেলাপি ঋণ নামে পরিচিত) অনেক বেড়ে গেছে। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকগুলোর পোর্টফোলিওর ৩৭ খেলাপি বিনিয়োগ ছিল, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১০ শতাংশের বিপরীতে, প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অনুপাত ছিল ২৫%।

মুডি'স জানিয়েছে, কিছু ইসলামী ব্যাংক ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে লোকসান দেখিয়েছে, যা তাদের চলমান চ্যালেঞ্জ এবং মুনাফার ওপর চাপের ইঙ্গিত দেয়।

২০২৬ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (IFRS) ৯ কার্যকর হলে ঋণখেলাপিদের দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া বাধ্যতামূলক হবে, যা ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য আরও একটি বড় ধাক্কা। যদিও এই নতুন নিয়মগুলো ব্যাংক খাতে ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করবে, তবে ব্যাংকগুলোকে বর্তমানের চেয়েও আগে থেকে সম্পদের অবমূল্যায়ন দেখাতে হবে, যা শুরুর বছরগুলোতে তাদের মুনাফায় চাপ সৃষ্টি করবে।

সরকারের সহায়তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মুডি'স'র মতে, দুর্বল সুশাসন এবং আমানতকারীদের আস্থার অভাবে ব্যাংকগুলোর প্রবৃদ্ধি সীমিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর কিছু ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করলেও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে।

সেপ্টেম্বরের পর থেকে দুর্বল সুশাসনযুক্ত ব্যাংকগুলো আমানত হারাচ্ছে, এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমেছে, যা তারল্য সংকট সৃষ্টি করছে এবং ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।

তবুও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মুডি'স আশা করছে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে এই খাতের অর্থায়ন প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে তাদের অংশীদারত্ব ২০২৫ সালের মার্চের ২৭% থেকে আরও বাড়বে।

ইসলামী ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি স্কিম চালু করেছে — ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (IBLF) এবং মুদারাবাহ লিকুইডিটি সাপোর্ট (MLS)। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক IBLF এর মাধ্যমে ৯৬ হাজার কোটি টাকা এবং MLS এর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা সরবরাহ করেছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে IBLF এর মাধ্যমে এই সহায়তার পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা হয়। একই সময়ে, MLS এর মাধ্যমে তারল্য সহায়তা বেড়ে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরে দেওয়া এই তারল্য সহায়তা বাংলাদেশের জিডিপির ৩.৮০ শতাংশ বা মোট ইসলামী ব্যাংকিং সম্পদের ২২.১ শতাংশ।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত