ঢাকা, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

রাশিয়ার হেলিকপ্টার কিনে বিপাকে বাংলাদেশ

২০২৫ আগস্ট ২০ ১৯:১৯:০১

রাশিয়ার হেলিকপ্টার কিনে বিপাকে বাংলাদেশ

রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা দুটি হেলিকপ্টার আনার ক্ষেত্রে জটিল সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। পতিত আ’লীগ সরকারের সময়ে কেনা এমআই-১৭১ এ২ মডেলের দুটি হেলিকপ্টারের দাম ৪০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ২৯৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে হেলিকপ্টারগুলো দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ এখন কূটনৈতিক সমাধান খুঁজছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই তারা বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হলো জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স।

চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানটি গত ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে কার্গো বিমানে হেলিকপ্টার পাঠানোর প্রস্তুতি নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ সে প্রক্রিয়া স্থগিত করে।

হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল দুর্গম এলাকায় সন্ত্রাস দমন ও পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ পুলিশ ও রাশিয়ান হেলিকপ্টার্সের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আন্দ্রে আই ভোগেনিস্কি। একই বছরের ৬ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং ১৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়। তখন পুলিশ সদর দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, হেলিকপ্টার দুটি বেসামরিক কাজে ব্যবহার হবে এবং পুলিশের এয়ার উইং গঠন করা হবে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, ২০২১ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও কেন একই বছরের নভেম্বরে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হলো এবং বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করা হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ চুক্তির কারণে বর্তমান সরকার বিপাকে পড়েছে। কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, হেলিকপ্টার দুটি বর্তমানে রাশিয়ার ওয়্যারহাউসে রাখা আছে এবং সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি খরচ হচ্ছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী হেলিকপ্টার গ্রহণ না করলে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করতে হতে পারে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি মামলা করতে পারে, কারণ বিরোধ নিষ্পত্তির ধারা আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন সেন্টার (এসআইএসি)-এ পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানা যায়, তারা গত জুনে মতামত দিয়েছিল হেলিকপ্টার আনা হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানো দরকার যে হেলিকপ্টার দুটি বেসামরিক কাজে, বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হবে। এগুলো বাংলাদেশের জন্য তৈরি হওয়ায় অন্য কোনো দেশে পাঠানো সম্ভব নয়।

ব্যাংকার ও মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞ মামুন রশীদ বলেন, নিষেধাজ্ঞাভুক্ত দেশ বা প্রতিষ্ঠান থেকে সরঞ্জাম আনা ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তাই সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিকফা (বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি) চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে অনুমতি নেওয়া শ্রেয়।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, সরকার চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রেয়াত চাইতে পারে। হেলিকপ্টার দুটি বেসামরিক কাজে ব্যবহারের বিষয়টি এবং আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি ব্যাখ্যা করলে যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতা বুঝে অনুমতি দিতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত