ঢাকা, বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২

লাভ দ্বিগুণ করার পাঁচ ট্রেডিং কৌশল: যা অভিজ্ঞ ট্রেডারও মিস করেন

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ আগস্ট ১১ ২২:৫৪:৪৭
লাভ দ্বিগুণ করার পাঁচ ট্রেডিং কৌশল: যা অভিজ্ঞ ট্রেডারও মিস করেন

আপনি কি শেয়ারবাজারে নিয়মিত ট্রেড করছেন? কিন্তু মাস শেষে লাভের খাতাটা খুব বেশি ভারী হচ্ছে না? হয়তো আপনি ভালো শেয়ারই কিনছেন, কিন্তু সঠিক সময়ে বিক্রি করতে না পারায় মুনাফা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অথবা, বাজারের উত্থান-পতনে বারবার লোকসান গুনতে হচ্ছে। যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্যই।

শুধু মৌলভিত্তি দেখে শেয়ার কিনে বসে থাকাই সফলতার একমাত্র পথ নয়। বরং বাজারের গতিবিধি বোঝা এবং কিছু প্রমাণিত কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীও হয়ে উঠতে পারেন একজন বুদ্ধিমান ট্রেডার। চলুন জেনে নেওয়া যাক লাভ দ্বিগুণ করার সেই ৫টি কার্যকরী কৌশল, যা অনেক অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীও এড়িয়ে যান।

১. সুইং ট্রেডিং: ঢেউয়ে ভেসে থাকার শিল্প

দিনের পর দিন শেয়ার ধরে না রেখে, বাজারের স্বল্পমেয়াদী ঢেউকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করার নামই সুইং ট্রেডিং। এর মূল ভিত্তি হলো, শেয়ারের দাম সরলরেখায় বাড়ে না, বরং ঢেউয়ের মতো বাড়ে-কমে। এই কৌশল প্রয়োগ করতে আপনাকে দুটি জিনিস চিনতে হবে: সাপোর্ট (Support) এবং রেজিস্ট্যান্স (Resistance)।

* সাপোর্ট: এটি হলো সেই প্রাইস লেভেল, যেখানে শেয়ারের দাম কমার পর একটি সমর্থন পায় এবং আবার বাড়তে শুরু করে। বুদ্ধিমান ট্রেডাররা এই সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি দামে শেয়ার কেনেন।

* রেজিস্ট্যান্স: এটি হলো সেই প্রাইস লেভেল, যেখানে দাম বাড়ার পর একটি বাধার সম্মুখীন হয় এবং আবার কমার সম্ভাবনা থাকে। এই লেভেলে পৌঁছালে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়া হয়।

*কীভাবে চিনবেন? ক্যান্ডেলস্টিক চার্টে নজর রাখুন। Hammer, Bullish Engulfing বা Morning Star-এর মতো প্যাটার্ন তৈরি হলে বুঝবেন শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে, Shooting Star বা Bearish Engulfing প্যাটার্ন দেখলে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।

২. ভলিউম অ্যানালাইসিস: ভেতরের খবর জানুন

একটি শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কতজন মানুষ সক্রিয়, তা বোঝা যায় ভলিউম (Volume) দেখে। ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট দিনে মোট কতগুলো শেয়ার হাতবদল হলো তার পরিমাণ।

* শক্তিশালী ট্রেন্ড: যদি কোনো শেয়ারের দাম বাড়ার সাথে সাথে তার লেনদেনের ভলিউমও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে, তবে বুঝবেন এই দাম বাড়ার পেছনে শক্তিশালী ক্রেতার চাপ আছে এবং এই ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।

* দুর্বল ট্রেন্ড বা ফাঁদ: যদি দাম বাড়ে কিন্তু ভলিউম খুব কম থাকে বা আগের দিনের চেয়ে কমে যায়, তবে सावधान! এটি একটি ফাঁদ হতে পারে। বড় কোনো গ্রুপ হয়তো অল্প শেয়ার কিনে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

৩. সেক্টর রোটেশন: সময়ের আগে সেরা সেক্টরটি বেছে নিন

শেয়ারবাজারের সব সেক্টর এক সাথে পারফর্ম করে না। অর্থনীতির অবস্থার সাথে সাথে এক সেক্টর থেকে টাকা বেরিয়ে অন্য সেক্টরে প্রবেশ করে। একেই বলে সেক্টর রোটেশন।

* বাজেটের পর: সাধারণত বাজেট ঘোষণার পর সিমেন্ট, স্টিল বা পাওয়ার সেক্টরের মতো অবকাঠামো খাতগুলো লাভবান হয়।

* ঈদের আগে: ব্যাংক ও আর্থিক খাতের লেনদেন বাড়ে।

*শীতকালে: ফার্মাসিউটিক্যালস বা টেক্সটাইল খাতের চাহিদা বাড়ে।

সঠিক সময়ে সঠিক সেক্টরটি ধরতে পারলে আপনার পোর্টফোলিও অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত বাড়বে।

৪. ডিভিডেন্ড ও রাইট শেয়ারের খেলা বোঝা

অনেকেই শুধু ভালো ডিভিডেন্ড দেখেই শেয়ার কেনেন, যা একটি বড় ভুল।

* ডিভিডেন্ড ফাঁদ: ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর अक्सर শেয়ারের দাম কমে যায়। কারণ যারা শুধু ডিভিডেন্ডের জন্য শেয়ার কিনেছিলেন, তারা রেকর্ড ডেটের পর তা বিক্রি করে দেন। তাই ডিভিডেন্ড ঘোষণার অনেক আগে থেকে শেয়ারে বিনিয়োগ করুন।

* রাইট শেয়ার: রাইট শেয়ার ঘোষণার পর দাম কমার একটি প্রবণতা দেখা যায়। আপনার যদি কোম্পানীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আস্থা থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের ইচ্ছা থাকে, তবেই রাইট শেয়ারের জন্য আবেদন করুন।

৫. মানি ম্যানেজমেন্ট: লোকসানকে সীমাবদ্ধ করুন

শেয়ারবাজারে শতভাগ সফল হওয়া অসম্ভব। লোকসান হবেই, কিন্তু তাকে সীমাবদ্ধ রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এর জন্য রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও (Risk-Reward Ratio) মেনে চলুন।

সহজ কথায়, প্রতিটি ট্রেডে নামার আগে ঠিক করুন, কত টাকা লাভ হলে আপনি শেয়ারটি বিক্রি করবেন এবং কত টাকা লোকসান হলে আপনি আর অপেক্ষা না করে বের হয়ে যাবেন (স্টপ-লস)। একটি আদর্শ রেশিও হলো ১:৩, অর্থাৎ ১ টাকা লোকসানের ঝুঁকির বিপরীতে কমপক্ষে ৩ টাকা লাভের সম্ভাবনা থাকলে তবেই সেই ট্রেডে প্রবেশ করুন।

এই কৌশলগুলো কোনো জাদুকরী সমাধান নয়; সফলতার জন্য দরকার ধৈর্য, শৃঙ্খলা এবং বাজার সম্পর্কে নিয়মিত শেখার মানসিকতা। নিজের জন্য একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়িয়ে চলুন। তবেই শেয়ারবাজার আপনার জন্য মুনাফার এক নির্ভরযোগ্য উৎসে পরিণত হবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত