ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মামলার রায় নিয়ে কি বলছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী?

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১১:০২:০৬

মামলার রায় নিয়ে কি বলছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী?

নিজস্ব প্রতিবেদক: পলাতক ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার ভালোভাবে ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ে শেখ হাসিনা খালাস পেলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী আমির হোসেন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, "আমি আমার মক্কেলের খালাস চাই। এই চাওয়াটা তো স্বাভাবিক। এটা প্রত্যেকেই চাইবে।" শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিনি চেষ্টা করেননি এবং চেষ্টা করার কোনো বিধানও নেই। এমনকি, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কোনো যোগাযোগ বা সহায়তা করা হয়নি, যা আইনগতভাবেও ঠিক নয়।

আমির হোসেন বলেন, "আমি তো সবসময় আশা করি আমার মক্কেল (শেখ হাসিনা) খালাস পাবে। এটা আমার আশা, এটা আমার প্রত্যাশা। এটাই স্বাভাবিক কথা, আমার তো প্রত্যাশা থাকতেই হবে। এটা হৃদয় থেকেই বলছি। আমি একজনের জন্য এত এত মাস ধরে মামলা করেছি, তা সে যদি খালাস পায় তা আমার চাইতে বেশি খুশি আর কে হবে।" তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন যে, ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া ভালোভাবে ও স্বচ্ছ হয়েছে।

রাজসাক্ষী আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন, কারণ মামুন তার মক্কেল নন।

আসামি পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী প্রসিকিউশনের দাবির বিপরীতে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, "উনারা (প্রসিকিউটর) তো ওনাদের কথা বলবেনই। আমি আমার কথা বলবো। এটাই স্বাভাবিক। বিচার বিবেচনা করবে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল।"

এদিকে, শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে গতকাল (রোববার) সন্ধ্যার পর থেকেই দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জনসাধারণের চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।

গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেখ হাসিনার এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। আর ৯ কার্যদিনে চলে প্রসিকিউশন-স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক পাল্টা যুক্তিখণ্ডন। ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণে সময় দেওয়া হয়।

যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে প্রসিকিউশন। তবে রাজসাক্ষী হওয়ায় মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও তার খালাস চেয়েছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। হাসিনা-কামালও খালাস পাবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাষ্ট্রনিযুক্ত আমির হোসেনের।

এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার এবং সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত