ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে রাজশাহীতে দ্রুত ছড়াচ্ছে এইচআইভি

২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১০:৩৪:৩৩

সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে রাজশাহীতে দ্রুত ছড়াচ্ছে এইচআইভি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৮ জন নারী-পুরুষসহ একজন হিজড়া এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে একজন রোগী মারা গেছেন এইডসে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী। দীর্ঘমেয়াদি পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে রাজশাহীতে এইচআইভি সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান, এবং ২০২৫ সালে সংক্রমণ সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজশাহীতে যৌনকর্মীর তুলনায় সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমণ বেশি। গত ছয় বছরে ৯৩ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন, এ সময়ে ৮ জন এইডসে মারা গেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের এইচটিসি (হাইভ টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং) সেন্টারে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন পরীক্ষা করাতে আসেন। যাদের পজিটিভ আসে, তাদেরকে নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রামেক হাসপাতালের আইটডোরে এইচটিসি সেন্টারে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পজিটিভ রোগীদের কাউন্সেলিং করা হলেও ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। রাজশাহী জেলা ও আশেপাশের রোগীদের বিনামূল্যে এইচআইভি ওষুধ নিতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) যেতে হয়। এই ব্যবস্থা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় রোগীদের জন্য সঠিক সুবিধা পৌঁছায় না।

২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সেন্টারে নমুনা পরীক্ষার ধারা দেখলে দেখা যায়, নমুনা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৯ সালে ৭৭ জন পরীক্ষা, পজিটিভ ০; ২০২০ সালে ২ জন; ২০২১ সালে ১,৫২৭ জন পরীক্ষা, ৮ জন পজিটিভ; ২০২২ সালে ২,০৩১ জন পরীক্ষা, ৮ জন পজিটিভ; ২০২৩ সালে ২,৩৬০ জন পরীক্ষা, ২৪ জন পজিটিভ; ২০২৪ সালে ৩,৫৩২ জন পরীক্ষা, ২৭ জন পজিটিভ; ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২,৩৪৬ জন পরীক্ষা, ২৮ জন পজিটিভ।

গত দুই বছরে সংক্রমণ নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ২৭ জন পজিটিভের মধ্যে ১৬ জনের সংক্রমণ সমকামী সম্পর্ক থেকে হয়েছে, ১০ জন সেক্স ওয়ার্কার, একজন ব্লাড ট্রান্সফিউশন। ২০২৫ সালে ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জন সমকামী, ১০ জন সেক্স ওয়ার্কার, একজন ব্লাড ট্রান্সফিউশন।

এইচআইভি পজিটিভ একজন রোগী জানিয়েছেন, পজিটিভ হওয়ার পর মানসিক চাপ, আত্মদোষ ও ভয় ছিল। নিয়মিত কাউন্সেলিং ও ওষুধ গ্রহণের পর তিনি ভালো আছেন।

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, কখনও কখনও আত্মহত্যার চিন্তাও করেন। নিয়মিত এইচটিসি সেন্টারে আসা ও কাউন্সেলিংয়ে তাদের সুস্থ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডা. ইবরাহীম মো. শরফ, রামেক এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পার্সন, জানান, এইচআইভি সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান উপায় হলো অরক্ষিত যৌনমিলন, সমকামী বা নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে। এছাড়া মা থেকে শিশুর সংক্রমণও হয়। প্রতিরোধে সঠিক কনডম ব্যবহার, যৌনসঙ্গী সীমিত রাখা, রক্ত বা অঙ্গ-পরিবহনের ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত