ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২

ডাকসু থেকে জাকসু: নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ কম: নেপথ্যে কী?

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১২:৫৭:১৪

ডাকসু থেকে জাকসু: নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ কম: নেপথ্যে কী?

মোবারক হোসেন:দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ছাত্র রাজনীতির এই প্রাণবন্ত প্রত্যাবর্তনের মাঝেও একটি বিশেষ দিক উদ্বেগজনক—তা হলো নারী শিক্ষার্থীদের স্বল্প অংশগ্রহণ। মোট ১১ হাজার ৯১৯ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪৮.৮০ শতাংশ নারী হলেও, প্রার্থী তালিকায় তাদের উপস্থিতি খুবই কম।

জাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদের জন্য ৯ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদের জন্য ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জিএস পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দা আনান্না ফারিয়ার হঠাৎ সরে দাঁড়ানো নারী শিক্ষার্থীদের শীর্ষ নেতৃত্বের পদে আসতে দ্বিধার আরও একটি ইঙ্গিত প্রদান করছে।

হল সংসদের চিত্র আরও হতাশাজনক

হল সংসদ নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা গেছে। বেগম সুফিয়া কামাল হল ও নবাব ফয়জুন্নেসা হলে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী ছিল না। ফয়জুন্নেসা হলে ১৫টি পদের মধ্যে ৯টি এবং সুফিয়া কামাল হলে ৫টি পদ শূন্য রয়েছে। ১০টি নারী হলের মধ্যে ১৫০টি নারী পদের মধ্যে মাত্র ৩৪টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে এবং ৫৮টি পদে কোনো প্রার্থীই নেই।

এই পরিস্থিতি শুধু জাকসুতে নয়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনেও দেখা গেছে। ডাকসু নির্বাচনে ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ নারী হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় প্যানেলে মাত্র ১৩ শতাংশ এবং হল পর্যায়ে মাত্র ১৭ শতাংশ নারী প্রার্থী ছিলেন। জিএস পদের জন্য একজন এবং ভিপি পদের জন্য মাত্র পাঁচজন নারী প্রার্থী ছিলেন, যা নেতৃত্বের পদে লিঙ্গ বৈষম্যের স্পষ্ট ইঙ্গিত।

অংশগ্রহণে বাধা: যৌক্তিক কারণ না কি সামাজিক চাপ?

নারী শিক্ষার্থীদের কম অংশগ্রহণের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। জাকসু'র একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী লামিয়া রহমান তৌসি পূর্ণতা বলেছেন, নারী প্রার্থীদের হয়রানি, সাইবারবুলিং এবং চারিত্রিক হয়রানির মতো বিষয়গুলো তাদের নিরুৎসাহিত করে। তিনি তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন, যেখানে তার বাবা-মায়ের ছবি ব্যবহার করে এবং ধর্ষণের হুমকি দিয়ে তাকে অনলাইনে আক্রমণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে বিরোধী পক্ষ ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অশ্লীল মন্তব্য ছড়ায়। তৌসির মতে, এসব কারণেই নারীরা ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে ইতস্তত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট ড. সালমা নাসরিন এই বিষয়ে বলেন, "আমরা কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করিনি। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভোট দিয়েছে।"

তবে, হল সংসদ রিটার্নিং অফিসার শেখ জিনাত শারমিন ভিন্ন একটি কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের কারণে অনেকেই ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন, যা তাদের জন্য ভোট কেন্দ্রে আসা কঠিন করে তোলে।

ভোট দেননি এমন একজন হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী জারিন ওহি। তিনি বলেন, "আমার বাসা মিরপুরে, ক্যাম্পাস থেকে অনেক দূরে। আসা-যাওয়ার ঝামেলা অনেক।" আরেক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করে জানান, তার বাবা-মা ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের আশঙ্কায় তাকে ভোট দিতে নিষেধ করেছিলেন। এসব ব্যক্তিগত কারণগুলো মূলত নারী শিক্ষার্থীদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপকে ফুটিয়ে তোলে।

অচেনা ভোটের প্রক্রিয়া

লামিয়া রহমান তৌসি নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, নারী হলগুলোতে পুরুষ সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ সাংবাদিক পুরুষ হওয়ায় নারী সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এছাড়াও, ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ নিয়েও কোনো স্পষ্ট নিয়ম নেই। এর ফলে ভোট প্রক্রিয়া কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত