ঢাকা, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২
ডাকসু নির্বাচন: শেষ হলো প্রচারণা, ক্যাম্পাসজুড়ে উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনা
.jpg)
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ছয় বছর পর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসে আবারও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
প্রচারণা কার্যক্রম গত ২৬ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে আজ (রোববার) শেষ হলো।
এই সময়ে প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, কার্জন হল, বিভিন্ন অনুষদ ও আবাসিক হল এলাকায় জোরালো প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রার্থীরা আজ রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন।
সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের ছড়াছড়ি। প্রচারের জন্য হাতে হাতে বিতরণ করা এসব কাগজ মুহূর্তের মধ্যেই রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে। এর ফলে টিএসসি, কার্জন হল এবং বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির সামনের রাস্তায় কাগজের স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে প্রচারণার ব্যাপকতা প্রতিফলিত হলেও, পরিবেশ দূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রচারণার অভিনব কৌশল
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল কৌশল অবলম্বন করেছেন। কার্যকরী সদস্য পদে এক প্রার্থী এক হাজার টাকার নোটের আদলে লিফলেট ছাপিয়েছেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। অন্য এক প্রার্থী মার্কিন এক ডলারের আকারের প্রচারপত্র তৈরি করেছেন। এছাড়াও ইংরেজি পত্রিকার পেপার কাটিং, বিড়াল প্রেমীদের জন্য বিড়াল, হাতপাখা, খেলার ব্যাড-বলসহ নানাভাবে লিফলেট বানিয়ে চলেছে প্রচারণা। শেষ সময় পর্যন্ত ভোটারদের আকৃষ্ট করতে অভিনব প্রচারণার কৌশল অবলম্বন করেছেন প্রার্থীরা।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, প্রচারণার আবহ এবার তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল। বড় কোনো সংঘর্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
হলগুলোতে ভোটারদের রুমে গিয়ে চাচ্ছেন ভোট
নির্বাচনী উত্তাপকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই তৈরি হয় উৎসবমুখর আবহ। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরা হলগুলো ঘুরছেন। রুমে রুমে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। লিফলেট বিলি করছে জানাচ্ছেন নিজের ইশতেহারের বিষয়ে। জয়ী হলে কী কী করবেন সেটাও জানাচ্ছেন সুযোগ পেলে। ভিপি-জিএস থেকে সম্পাদক, একা অথবা দল-বল নিয়ে ভোটারদের রুমে গিয়ে ভোট চেয়েছেন পুরোটা সময়।
হল সংসদের প্রার্থীদের সরব প্রচারণা
কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচন নিয়েও প্রার্থীরা সমান তৎপর ছিলেন। প্রতিটি প্রার্থী আবাসিক শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোথাও প্রতিশ্রুতি হয়েছে ডাইনিংয়ের মানোন্নয়ন, হলে জিমনেসিয়াম ও খেলাধুলার সরঞ্জাম সরবরাহ, আবার কোথাও লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষের সুবিধা বৃদ্ধির দাবি উঠেছে।
শেষ দিনে প্রতিটি হলে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় ও নিজেদের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপনে ব্যস্ত ছিলেন।
প্রচারণার শেষ দিনেও থেমে যায়নি রুম-টু-রুম কার্যক্রম। প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের কক্ষ কক্ষ ঘুরে সরাসরি কথা বলেছেন এবং নিজেদের ভিশন তুলে ধরেছেন। অনেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে পড়াশোনা ও আবাসিক জীবনের সমস্যা নিয়েও খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রার্থীদের মতে, শেষ মুহূর্তের এই সরাসরি যোগাযোগ ভোটের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস ও প্রশাসনের প্রস্তুতি
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। বিশেষ করে ভিপি, জিএস এবং এজিএস পদে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আসছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দীন বলেন, নির্বাচন দিন ঘিরে ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ নির্বাচনকে ঘিরে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসন শতভাগ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার কয়েকশ সাংবাদিকও ভোটের দিন মাঠে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। ভোটের ক্ষেত্রেও কারচুপি যাতে না হয় সেক্ষেত্রে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশা
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিতে যাচ্ছেন এমন অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিলহজ্জ শেখ বলেন, আমরা শুধু চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এতে আসল প্রতিনিধি উঠে আসুক। ভোটের পর নির্বাচিতরা যেন ইশতেহার ভুলে না যায়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসজুড়ে এমন উৎসবের পরিবেশ দেখে খুবই ভালো লাগছে। আমরা সবাই চাই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে।
প্রার্থীরা যা বলছেন
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রনির্বিশেষে প্রত্যেকের সমান অধিকার ভোগ করা, সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা, সবার ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। তবে পরে কিছু ট্যাগিং-ফ্রেমিং দেখা গেছে, যা বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। আমরা চাই সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠুক, যেখানে মতভেদ থাকবে, বিতর্ক হবে, কিন্তু দিন শেষে রাষ্ট্রের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।
ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন, গত ১১ দিন প্রচার-প্রচারণা চালালাম। শিক্ষার্থীর আবাসিক হলের রুমে রুমে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। জয়ী হলে তাদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করার জন্য কর্মপরিকল্পনা শেয়ার করছি। এতে তাদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, প্রতিবছর ক্যাম্পাসে যেভাবে পরীক্ষা হয়, সেভাবে ডাকসু নির্বাচন যেন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়, সেই কাজ করা হবে। এর জন্য ডাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্তি করার জন্য আমরা কাজ করব। এছাড়া, ডিপার্টমেন্টে যাদের ভালো ফল থাকবে, একাডেমিক এক্সিলেন্ট থাকবে, তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। বিগত সময়ে রাজনৈতিক মতাদর্শের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হতে দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, আবাসন সংকট দীর্ঘমেয়াদি। এই সংকট নিরসনে হল নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাধ্য করা হবে। স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যে আশা নিয়ে ভর্তি হয়, তা পূরণের পরিবেশ তৈরি করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্র হল থেকে দূরে স্থাপন করা হয়েছে যেন তাদের ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমে যায়। একই সঙ্গে সেনা মোতায়েনের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করেছে, অন্যদিকে পরীক্ষা চলমান রেখেছে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখনো সময় আছে। এত বছর পর ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা যেন তাদের ডাকসুকে কার্যকর করতে পারে, এ সুযোগ নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
ক্যাম্পাসজুড়ে নিরাপত্তা জারি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচারণার শেষ দিনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ক্যাম্পাসের সাতটি প্রবেশপথে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলো (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত) সাধারণ শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে বৈধ ঢাবি আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবেশ করতে পারবেন।
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরাও নিজ শিক্ষকের বা কর্মকর্তার পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। এই সময় ক্যাম্পাসে স্টিকারযুক্ত যানবাহন এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিস) ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৫ কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে দ্রুত মুনাফা তোলার ৫টি ট্রেডিং টিপস
- রবির মাধ্যমে দেশে আসছে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
- শেয়ারবাজারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের নতুন যাত্রা
- তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়
- আট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি
- নতুন উচ্চতায় অগ্রসর হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
- সর্বনিম্ন দামে আটকে গেল ৭ কোম্পানির শেয়ার
- পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার
- চার জেডের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ আস্থা
- শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মাথাব্যথার ১১ শেয়ার
- মুনাফা কমলেও ডিভিডেন্ড বেড়েছে ওয়ালটনের
- সর্বোচ্চ চাহিদায় নাগালের বাইরে ১৪ প্রতিষ্ঠান