ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২
পাকিস্তানের ঐতিহাসিক ঢাকা সফর: সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তার ঢাকা সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি হবে দুই দেশের অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায়। তিনি উল্লেখ করেন, করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট এবং লাহোর থেকে ঢাকা— দুই দেশের তরুণরা একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে এবং স্বপ্ন ভাগাভাগি করবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দুই দেশের সম্পর্ক দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়েও কয়েক দফা সফর হয়েছে। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও স্থল বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা পাকিস্তান সফর করেছেন এবং পাকিস্তানি প্রতিনিধিরাও ঢাকায় এসেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত দ্রুত সম্পর্কের অগ্রগতি কেউই প্রত্যাশা করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দিলওয়ার হোসেন এটিকে কৌশলগত গতি বলে মনে করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান এখন ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের মতো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেখছে।
তবে অতীতের ইতিহাস—বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি—এখনো সম্পর্কের বড় বাধা। বাংলাদেশ এখনও পাকিস্তানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে আসছে। উর্দুভাষী অবাঙালি মুসলমানদের নাগরিকত্ব এবং ১৯৭১-পূর্ব সম্পদ বণ্টনের বিষয়গুলোও অমীমাংসিত রয়েছে।তবুও অনেকেই আশাবাদী। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী মনে করেন, দুই দেশের জনগণ পুনর্মিলনের পক্ষে। তার মতে, ভারতীয় আঞ্চলিক আধিপত্য মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে একত্রিত হতে হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৬৬১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, বিপরীতে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ৫৭ মিলিয়ন ডলার। বিশেষজ্ঞদের মতে, টেক্সটাইল, ফল, চাল, সিমেন্টের পাশাপাশি পাটজাত পণ্য, কেমিক্যাল ও তামাকজাত দ্রব্যে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
এদিকে চীন, যিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উভয় দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে, এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ সম্প্রতি চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় বিবেচনা করছে—যা পাকিস্তান ইতিমধ্যে ব্যবহার করছে।বিশ্লেষকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে সম্পর্কের প্রতিবন্ধকতা হলেও, অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার বাস্তবতা দুই দেশকে কাছাকাছি আসতে বাধ্য করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন অর্থনীতিনির্ভর। সম্পর্ক কেবল নিরাপত্তা নয়, অর্থনীতিকেও প্রাধান্য দিতে হবে।অতীত ভুলে না গিয়ে, তাকে দায়িত্বশীলভাবে মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে—এমনটাই আশা করছে দুই দেশের নাগরিক সমাজ ও বিশ্লেষকরা।
নয়ন
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ১১ কোম্পানিতে
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- চলতি বছর শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্রায়াত্ব দুই প্রতিষ্ঠান
- মার্জারের সাফল্যে উজ্জ্বল ফার কেমিক্যাল
- তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১৫ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথম ‘নো ডিভিডেন্ড’
- তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়
- বিমা আইন সংস্কার: বিনিয়োগ ও আস্থায় নতুন দিগন্ত
- ডেনিম উৎপাদন বাড়াতে এভিন্স টেক্সটাইলসের বড় পরিকল্পনা
- শেয়ারবাজারে রেকর্ড: বছরের সর্বোচ্চ দামে ১৭ কোম্পানি
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- ব্যাখ্যা শুনতে ডাকা হচ্ছে শেয়ারবাজারের পাঁচ ব্যাংককে