ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১৬ বছরের ধ্বংসস্তূপে দেশের শেয়ারবাজার, কবে ফিরবে আস্থা?

২০২৫ মে ২৩ ১১:৫৯:৫৫
১৬ বছরের ধ্বংসস্তূপে দেশের শেয়ারবাজার, কবে ফিরবে আস্থা?

ডুয়া নিউজ: দেশের শেয়ারবাজার গত ১৬ বছরে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বাজারে সুশাসনের অভাব এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারকে ঘুরে দাঁড় করাতে স্বল্পমেয়াদি কার্যকর উদ্যোগ জরুরি হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তা ধীর গতির এবং এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এতে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ছেন।

১৯৯৬ ও ২০১০ সালে দেশের শেয়ারবাজার দুটি বড় ধ্বসের মুখে পড়ে। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরেও বাজারে কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরেনি। এই দুই সময়েই বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, সরকারের মদদপুষ্ট প্রভাবশালী মহল— সালমান এফ রহমান, খায়রুল হোসেন এবং শিবলী কমিশনারের নেতৃত্বে—লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ভঙ্গুর ও অযোগ্য কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে বাজার থেকে আস্থা হারিয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

তবে চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর নতুন করে আশার আলো দেখা দেয় শেয়ারবাজারে। তিন দিনের মধ্যে সূচক ১ হাজারের বেশি সূচক বেড়ে যায়। কিন্তু এ ধারা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর ১৫১ দিনের মধ্যে ১ হাজারের বেশি সূচক কমে যায়। বিনিয়োগকারীরা আবারও হতাশ হয়ে পড়েন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাজারের এমন ধ্বস থেকে উত্তরণে দ্রুত ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদে কিছু প্রণোদনা ও নীতিগত সমর্থন প্রয়োজন ছিল বাজারে আস্থা ফেরাতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “এই বাজার উদ্ধারে প্রণোদনা দরকার—তা অর্থনৈতিক হোক, মনস্তাত্ত্বিক হোক বা রাজনৈতিক হোক। গত ১৫ বছরে বাজারের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, দুঃশাসন হয়েছে, অপশাসন হয়েছে। এখন যেভাবেই হোক, বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। টাস্কফোর্স গঠনের ৯ মাস পরও ১৭টি সুপারিশের মধ্যে মাত্র কয়েকটি বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে। এ ধীর গতির সংস্কার কার্যক্রম বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার আরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমন অভিযোগ বাজার সংশ্লিষ্টদের।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বাজেট ও আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বাজারে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। বেশ কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, “বিভিন্ন সেক্টরাল রিপোর্টগুলোকে একত্র করে একটি সামগ্রিক রূপরেখার মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে। একসাথে সব করা সম্ভব না হলেও ধাপে ধাপে অগ্রগতি আনা হবে।”

বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) দক্ষ ও পেশাদার লোক নিয়োগ, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রণোদনার সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি প্রণোদনা ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ, নতুন বিনিয়োগকারী আকর্ষণে বাজার বান্ধব পরিবেশ তৈরি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা।

সার্বিকভাবে বলা যায়, শেয়ারবাজারে আস্থা ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনের বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকবে এবং সম্ভাবনাময় শেয়ারবাজারের ভবিষ্যত অন্ধকার অনিশ্চয়তার দিকেই ধাবিত হবে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে