ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জাতীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি

২০২৫ মে ১৬ ১৯:৫০:০৭
জাতীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি

ডুয়া ডেস্ক: 'নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা' থেকে পাঠানো এক ঘোষণাপত্রে নারীর অধিকারসংক্রান্ত নানা বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের দাবি তোলা হয়েছে ওই ঘোষণাপত্রে।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা থেকে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, চব্বিশের ব্যতিক্রমী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটময় সময়ে একত্র হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য—একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বৈষম্যবিরোধী এবং সাম্যের ওপর ভিত্তি করে। সমতা ও ন্যায্যতার পথে এই মৈত্রীযাত্রায় সকলকে স্বাগত জানানো হয়।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি—জুলাই অভ্যুত্থানের পরও নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এগিয়ে চলার পথ প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর স্বাভাবিক জীবনযাপনেও নানামুখী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যক্তিগত আক্রমণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা এবং অনলাইনে হয়রানির মতো কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। এছাড়া, বিভিন্ন এলাকায় পরিকল্পিতভাবে মিছিল-মিটিংয়ে হামলা, আন্দোলনে বাধা প্রদান, সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ চালানো, মোরাল পুলিশিং, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো ঘটনা, প্রকাশ্যে মারধর এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি অব্যাহত রয়েছে।

ঘোষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে। অন্যান্য খাতে সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিশনগুলোর মতো এটিও গঠিত হয়েছিল সমাজের প্রান্তিক, শ্রমজীবী এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা নারীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে। কমিশনটি ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করে, যার মধ্যে অনেক মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক অধিকার বিষয়ক সুপারিশগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। গঠনমূলক বিতর্ক বা সমালোচনার সুযোগ না দিয়ে এসব সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জনগণের সামনে ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা হচ্ছে। এমনকি কমিশনের সদস্যদের জনসমক্ষে অশোভন ও অবমাননাকর ভাষায় হেয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে ঘোষণাপত্রে।

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে বহু নারীর আত্মত্যাগ ও শহিদদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজ নারীর প্রতি চলমান নিপীড়ন, অবমাননা ও অপমানের বিরুদ্ধে অদ্ভুতভাবে নীরব। সরকারের নিজস্বভাবে গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ওপর ঘৃণ্য আক্রমণ চালানো হলেও, তা প্রতিহত বা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই নির্লিপ্ততা গভীর উদ্বেগের বিষয় বলেও উল্লেখ করা হয় ঘোষণাপত্রে।

১। অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে অপপ্রচার, এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

২। যারা আমাদের সমর্থন চায় নির্বাচনী অঙ্গীকারের মাধ্যমে হোক বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোক। তাদের স্পষ্ট করতে হবে নারী, শ্রমিক, জাতি, ধর্ম, ভাষা ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং এসব জনগোষ্ঠীর পূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত মুক্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান কী। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থীদের অন্তত শতকরা ৩৩ ভাগ নারী হতে হবে।

৩। নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা আমরা মেনে নেবো না। আমাদের মৌলিক অধিকারগুলোকে অস্বীকার করার ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিরোধ করবো। বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা, সংস্কৃতি ও ধর্মকে দমনমূলক অস্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা আমরা প্রতিরোধ করব। ইতিহাস বিচ্ছিন্ন কূপমণ্ডুকতার মাধ্যমে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে আমরা কিছুতেই সফল হতে দেবো না। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ইতিহাস দারুণ বৈচিত্র্যময় এবং সংবেদনশীল। সেই বিশালতাকে উপেক্ষা করে আমরা গুটি কয়েক মানুষের সংকীর্ণ ব্যাখ্যাকে সার্বজনীন হতে দেবো না। আমরা অধিকার ও ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে দেবো না, মর্যাদা নিয়ে কোনো ধরনের দ্ব্যর্থকতা মেনে নেবো না। আমরা সরকার ও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নারী বিষয়ক অবস্থান নজরদারিতে রাখবো। যে ক্ষমতা কাঠামো এসব জুলুমবাজি জিইয়ে রাখে, আমরা সেই কাঠামোকে ভাঙবো।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে