ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিলাস বহুল বিমান উপহার নিতে গিয়ে বিপাকে ট্রাম্প

২০২৫ মে ১৬ ১২:০৯:২৮
বিলাস বহুল বিমান উপহার নিতে গিয়ে বিপাকে ট্রাম্প

ডুয়া ডেস্ক: ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিলাসবহুল একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান কাতার সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দিতে চায়, যা ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বহরের অংশ হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সেই বিমান গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও বিভাজন।

যদিও ট্রাম্প নিজ দল ও রক্ষণশীল মহল থেকে কিছু সমর্থন পেয়েছেন, তবু হোয়াইট হাউসের জন্য এটি এখন বড় ধরনের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা ছাড়াও অনেক প্রভাবশালী কট্টর ট্রাম্প সমর্থকরাও এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করছেন।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইনফ্লুয়েন্সার এই বিমান উপহারকে ‘ঘুষ’, ‘উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি’ এবং ‘নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তারা ট্রাম্পের অতীত দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কথাও তুলে ধরেছেন।

কাতারের উপহার এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিমানটি গ্রহণের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত না হলেও, এর সম্ভাব্যতা নিয়েই ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নিউইয়র্ক পোস্ট-এর মতো কিছু ট্রাম্পঘনিষ্ঠ মিডিয়াও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। তারা লিখেছে, “এটি বিনামূল্যের উপহার নয়” এবং ট্রাম্পের এই বিমান গ্রহণ করা উচিত হবে না।

রক্ষণশীল বিশ্লেষক বেন সাপিরো বলেন, “এটা ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্ত। কাতার এতো বড় উপহার বিনা স্বার্থে দিচ্ছে, এটা ভাবা নেহাতই বোকামি।” তিনি কাতারের বিরুদ্ধে অতীতে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর পেছনে অর্থ ঢালার অভিযোগও তুলে ধরেন, যেগুলো কাতার বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

ট্রাম্পঘনিষ্ঠ ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারক লরা লুমারও এই চুক্তিকে “একটি কলঙ্ক” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং একে ‘ট্রোজান হর্স’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি বিতর্কিত কার্টুন পোস্ট করেছেন।

হোয়াইট হাউস ও কাতারের প্রতিক্রিয়া

হোয়াইট হাউস জানায়, বিমানটি আপগ্রেড ও সংস্কারে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে এবং এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হতে পারে। ট্রাম্পের মেয়াদ শেষে সেটি প্রেসিডেন্সিয়াল আর্কাইভে স্থানান্তর করা হবে বলেও জানানো হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, “যেকোনো বিদেশি উপহার যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রহণ করা হয়।”

কাতারও জানিয়েছে, এটি কেবল দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সরকারিভাবে পরিচালিত লেনদেন। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-থানি সিএনএন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এখানে ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি দ্বিপাক্ষিক ও আনুষ্ঠানিক চুক্তি। কাতার সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের একজন নির্ভরযোগ্য অংশীদার ছিল।”

বিতর্কের প্রেক্ষাপট

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সিতে কাতারকে সন্ত্রাসী সংগঠনের অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। সেই কাতারের কাছ থেকেই এখন তিনি বিলাসবহুল বিমান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—এটা অনেকের কাছেই দ্বিচারিতা হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিতর্ক ভবিষ্যতে ট্রাম্প প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক ও নৈতিক চাপ আরও বাড়াতে পারে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে