ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশ : দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ মে ১৬ ১৭:৫৩:৪৭
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশ : দ্য ইকোনমিস্ট

ডুয়া ডেস্ক: গত ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের মধ্যে দিয়ে গেছে বাংলাদেশ—এমনই মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও মাইক্রোক্রেডিট আন্দোলনের অগ্রদূত ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার ভাষায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসন ছিল এক প্রকার স্বৈরশাসন, যা ২০২৪ সালের আগস্টে একটি বৃহৎ গণআন্দোলনের মাধ্যমে অবসান হয়। এখন তিনি দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে জানাচ্ছেন, "আমরা যা হারিয়েছি তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। জনগণ আমাদের পাশে আছে, আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি।"

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর উঠে এসেছে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ ও গণহত্যার মতো মামলাও চলমান রয়েছে, যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দেশের সব রাজনৈতিক দল এখন এমন এক রাজনৈতিক কাঠামোর পক্ষে, যেখানে কেউ একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে।

সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই ড. ইউনূস বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেন। গঠন করা হয়েছে একাধিক কমিশন—নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সংবিধান সংশোধনসহ নানা বিষয়ে। এসব কমিশনে কাজ করছেন দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা।

এই উদ্যোগগুলোর সমন্বয় করছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। তারা ইতোমধ্যেই ১৬৬টি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং দেশের ৩৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত নিয়েছে। বর্তমানে ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রস্তুত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের নির্বাচন ও ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের ভিত্তি হবে।

তবে সবকিছু নিয়ে একমত নয় সবাই। অনেকে বলছেন, তৈরি পোশাক খাতের জন্য পৃথক কমিশন প্রয়োজন ছিল, আবার কেউ কেউ শিক্ষাখাতকে উপেক্ষিত মনে করছেন। সবচেয়ে বিতর্কিত হয়েছে নারী অধিকার নিয়ে গঠিত কমিশনের প্রস্তাব, যেখানে উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে জনমনে ও রাস্তায় প্রতিবাদ দেখা গেছে।

তবুও আশার আলো দেখছেন অনেকে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ জানিয়েছেন, বিচারপতি নিয়োগে ইতোমধ্যে স্বাধীনতা এসেছে। তার প্রত্যাশা, আগস্টের মধ্যেই একটি চূড়ান্ত নীতিমালা তৈরি হবে।

সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ড. ইউনূস নিশ্চিত করেছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে—যদিও তিনি নিজে তাতে অংশ নেবেন না। দ্রব্যমূল্য ও ব্যাংক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা এলেও, সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতি এখনো ধীর। রাজনৈতিক অস্থিরতাও রয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ নাগরিক মনে করেন আইনশৃঙ্খলার অবস্থা এখনো সন্তোষজনক নয়।

রাজপথে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে, যার মূল দাবি—আওয়ামী লীগের বিচার। ১২ মে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে, ফলে তারা আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। যদিও জনমনে দলটি নিয়ে ক্ষোভ আছে তবুও কিছু সমর্থন এখনো তারা ধরে রেখেছে। দলের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, "আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম, জঙ্গিদের মাধ্যমে আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আবার ফিরে আসার লড়াই চালিয়ে যাব।"

ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও দেশের রাজনীতিতে এখনো আওয়ামী লীগের প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে