ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

একের পর এক বন্ধ হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউস শাখা, বিপদে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ২০:১৮:৪৩

একের পর এক বন্ধ হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউস শাখা, বিপদে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য লেনদেনের সুবিধা সীমিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস শাখা ও প্রধান কার্যালয় বন্ধ রাখছে, ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি বা কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না। বাজারে লেনদেনের অভাব এবং খরচ কমানোর প্রয়াসেই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম সংকুচিত করছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১১৭টি ব্রোকারেজ অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে শাখা অফিসের পাশাপাশি কয়েকটি প্রধান কার্যালয়ও।

সাদ সিকিউরিটিজের মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জ শাখা বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসাইন। তিনি বলেন, “বাজার গতিবেগ খুব ধীর। শাখা অফিস খোলা রাখলে খরচ বাড়ে, আর লাভের সুযোগ নেই। বিনিয়োগকারীরা নেই বলেই আমরা শাখা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।”

ইতোমধ্যে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয়ও লেনদেন বন্ধ রেখেছে। ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. সাব্বির হুসাইন জানান, “৮ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত অফিস সরানোর জন্য সংস্কার চলছে। কাজ শেষ হলে লেনদেন পুনরায় চালু হবে।”

শার্প সিকিউরিটিজও একটি শাখা বন্ধ করেছে। এমডি মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমরা ক্লায়েন্টদের অনলাইন সেবা দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছি। বাজারে লেনদেন কম হওয়ায় খরচ কমানোও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চাহিদা বাড়লে পুনরায় শাখা চালু করার পরিকল্পনা আছে।”

বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিবন্ধনপ্রাপ্ত ৩০৭টি ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে ৫টির কার্যক্রম স্থগিত। সচল থাকা ৩০২টি হাউজের প্রধান ও শাখা অফিস মিলিয়ে প্রায় ১,৫০০টি অফিস চলছে। প্রধান ও শাখা অফিসের বেশিরভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত।

বাজারে লেনদেন কম হওয়া, সনদ নবায়ন না হওয়া এবং অফিস সংস্কারের কারণে এই ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ১১৭টি শাখা ও প্রধান কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে কিছু বিনিয়োগকারী বিকল্প লেনদেনের সুবিধা না পেয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না।

বিগত সময়ে শক্তিশালী ব্রোকারেজ হাউস বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের লেনদেন বন্ধ রয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মাসুদ আহমেদের ১৯ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এই হাউসের মাধ্যমে। তবে তার কেনা সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় নেমে গেছে। তিনি হাউজ বন্ধ থাকায় তার শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না এবং আনরিয়েলাইজড লস ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। মাসুদ বলেন, “বিপদের সময় টাকা তুলতে না পারলে বিনিয়োগের মান থাকে না। ছোট বিনিয়োগকারীর ক্ষতি হয়, বড়রা সুবিধা নিচ্ছে।”

একইভাবে, লেনদেন কম এবং অফিস সংস্কারের কারণে শেয়ারবাজারের অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারী সমস্যায় পড়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শাখা ও প্রধান কার্যালয় বন্ধের ফলে শেয়ারবাজারে বিশ্বাস ও বিনিয়োগের আস্থা কমতে পারে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

ডিএসই সূত্রের মতে, শাখা বন্ধ হলেও বেশ কিছু ব্রোকারেজ হাউস তাদের লেনদেন কার্যক্রম সীমিতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মূলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য লেনদেন সীমিত হওয়া এবং বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প না থাকাই উদ্বেগজনক।

এমজে/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত