ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

আধুনিক, বাসযোগ্য ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রত্যয় ছাত্রদলের

ডুয়া নিউজ- বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫ আগস্ট ২৮ ১৭:৪৯:৩৭
আধুনিক, বাসযোগ্য ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রত্যয় ছাত্রদলের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনমান, নিরাপত্তা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিস্তৃত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ। ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ইশতেহার পাঠ করেন, যেখানে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, পরিবহন সুবিধা, ডিজিটাল সেবা এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম সহ মোট দশটি প্রধান ক্ষেত্রের লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি উল্লিখিত হয়েছে।

এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাসিরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গনেশ চন্দ্র রায় সাহস ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহারগুলো হলো—

১. শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক, আনন্দময়, বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময় যেন প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী তাদের জীবনের মূল্যবান, শিক্ষণীয় এবং একই সঙ্গে আনন্দময় সময় হিসেবে মনে রাখতে পারে, সেই লক্ষ্যে সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ। গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দমন-নিপীড়নের মতো ঘৃণিত চর্চা বন্ধ করে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব থেকে চিরকালের জন্য মুক্তকরণ।

ভয়মুক্ত পরিবেশে ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করে সব ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথের শিক্ষার্থীর সহাবস্থান ও অধিকার চর্চার সুযোগ নিশ্চিতকরণ। ক্লাসরুম সংকট নিরসনে সময়োপযোগী অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ ও শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা।

শিক্ষার্থী নিপীড়ন, র‍্যাগিং, অনলাইন-অফলাইনে ঘৃণা ও মিস ইনফরমেশন প্রতিরোধে ডাকসুর অধীনে একটি স্বাধীন শিক্ষার্থী সুরক্ষা সেল গঠন ও শিক্ষার্থীদের যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন চালু। ক্যাম্পাসে মাদকসেবী ও ভবঘুরেসহ বহিরাগতদের অনধিকার প্রবেশ রোধ, পুরো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও রাতের আলো জ্বালানো নিশ্চিত করা। হলে বিশেষ সেল গঠন করে তার মাধ্যমে হলে কোনো প্রকার অছাত্র অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন হল নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, যেন ভর্তির দিন থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য 'একটি সিট ও একটি পড়ার টেবিল' নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

আবাসিক হলগুলোকে মশা ও পোকামুক্ত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের ওপর ভর্তুকি বৃদ্ধি, পুষ্টিবিদদের সমন্বয়ে টিম গঠন করে খাবারসমূহের স্বাস্থ্যগুণ ও পুষ্টিমান নিশ্চিত করা এবং সামগ্রিক পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনার গুণগত উন্নতি।

বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগীয় এলাকা, যেমন- মোকাররম ভবন, কার্জন হল, ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে নতুন ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়া স্থাপন, যেন সব শিক্ষার্থী সহজে সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে পারে।

২. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস, নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি

নারী শিক্ষার্থীদের পোশাকের স্বাধীনতা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। প্রতিটি আবাসিক হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তুকিতে স্যানিটারি প্যাড, ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন এবং হলের সব পরিচ্ছন্নতাকর্মী যেন নারী হয়, তা নিশ্চিতকরণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সার্বক্ষণিক নারী চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি নারী হলে স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট চালু করা।

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে সান্ধ্য আইন বিলোপের মাধ্যমে রাতে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধি এবং এক হলের নারী শিক্ষার্থীদের অন্য নারী শিক্ষার্থী হলগুলোতে প্রবেশ ও সাক্ষাতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা দূর করা। জরুরি প্রয়োজনে হল থেকে প্রস্থানের জন্য লোকাল গার্ডিয়ানের অনুমতির জটিলতা দূর করে, নারী শিক্ষার্থীদের জরুরি প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় হল প্রভোস্টের অনুমতি সাপেক্ষে রাতে হল থেকে প্রস্থানের নিয়মের সহজিকরণ।

অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীরা যেন হল প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে আবাসিক হলগুলোতে যৌক্তিক সময়কালে রাত্রিযাপন করাত পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির প্রস্তুতিকালে বেকার নারী গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ছয় মাস মেয়াদে স্বল্প খরচে আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় হোস্টেল নির্মাণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

নারী শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক আইডিয়া বাস্তবায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণে সহায়তা করতে 'নারী উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তহবিল' গঠন এবং মেন্টরশিপ, প্রশিক্ষণ ও স্টার্ট-আপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম চালু।

৩. শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণ ও চলাচল সহজতর করা

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো তথা সার্বক্ষণিক ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স, ফার্মেসি সেবা নিশ্চিত করা এবং জরুরি ঔষধসমূহ বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা। সব আবাসিক হলে ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ঔষধ ও ফার্স্ট এইড বক্সসহ মেডিকেল কর্নার স্থাপন করা।

প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য স্বাস্থ্য বিমা সেবার আওতায় নিয়ে আসা এবং বিমার টাকা দাবি ও প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করা। শিক্ষার্থীদের মেন্টাল স্ট্রেস, ডিপ্রেশন ও ট্রমা মোকাবিলার মাধ্যমে তাদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে টিএসসিতে একটি মেন্টাল ওয়েলবিয়িং সেন্টার গড়ে তোলা।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার জন্য বিদ্যমান ভবনসমূহে র‍্যাম্প স্থাপন করা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ব্রেইল এবং অন্যান্য সহায়ক ব্যবস্থাসমূহ নিশ্চিত করা।

৪. কারিক্যুলাম, অবকাঠামো পরীক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং গবেষণার মানোন্নয়ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিক্যুলাম আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে কিনা, সেটি নিয়মিত পর্যালোচনার জন্য ছাত্র, শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে কমিটি গঠন, যে কমিটির অন্যতম লক্ষ্য হবে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ সৃষ্টি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অফিসকে গতিশীল করা।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে একটি বিশ্বমানের লাইব্রেরিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিখ্যাত জার্নাল ও সার্চ টুলসের সাবস্ক্রিপশন নেওয়া, লাইব্রেরি সিস্টেমকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা এবং আবাসিক হলসমূহের রিডিং রুম ও বিভাগীয় লাইব্রেরিসমূহের পরিবেশ ও সরঞ্জাম উন্নয়ন।

শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবধর্মী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা।

ফ্রিল্যান্সিং, তথ্যপ্রযুক্তি, সফট স্কিলস ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিদেশি ভাষা শিক্ষা বিষয়ক বাস্তবমুখি ঐচ্ছিক কোর্স চালুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চাকরি ও পেশাগত জীবনের উপযোগী করে তোলা। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজ তৈরি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

শিক্ষক বা প্রশাসনিক ব্যক্তির পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যকর প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব বা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সংস্কৃতি বন্ধ করে আন্তর্জাতিক মানের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়মিত পারফরমেন্স মূল্যায়ন।

৫. পরিবহন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাটারিচালিত শাটল সার্ভিস প্রচলন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করা

অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরিধান, রেজাল্ট ও ফ্লাস কার্যক্রম নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন কোর্স, ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা। গবেষণাগার আধুনিকায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ তৈরি, বিদেশে অবস্থানরত অ্যালামনাইদের সম্পৃক্তকরণ এবং গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি।

এমফিল ও পিএইচডি গবেষকদের জন্য আলাদা আবাসনের ব্যবস্থা ও ভালো পরিমাণে মাসিক ভাতা প্রদানের উদ্যোগ, যেন গবেষণায় উৎসাহিত করা যায় এবং প্রশিক্ষণ ও প্রকাশনা সহায়তার সুযোগ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর পরিবেশবান্ধব শাটল সার্ভিস চালু করা। সব রুট আপ ট্রিপ দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং ডাউনট্রিপ ৯টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত শিক্ষার্থী বাস এবং বাস রুটের সংখ্যা ও পরিসর যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা।

বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়াকে গ্রিন, ইয়েলো এবং রেড জোনে ভাগ করে যানবাহন ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ (গ্রিন জোন ঢাকা মেডিকেল, বাংলা একাডেমি ইত্যাদি জনবহুল জায়গা, ইয়েলো জোন- অডিটোরিয়ামের মতো এরিয়া যেখানে গেস্ট, অ্যালামনাই ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যথাযথ পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে, রেড জোন- আবাসিক ও একাডেমিক এরিয়াগুলোতে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ)।

কল্যাণপুর ডিপোর ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে একাধিক ডিপো হতে যানবাহন সরবরাহ করে দক্ষ চালক এবং যানবাহন সংকট দূরীকরণ। প্রতিটি বাসে বাধ্যতামূলকভাবে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন করে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাসের লাইভ লোকেশন ও সময়সূচি জানতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রুটে যান চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য সব যানবাহনের ফিটনেস নিয়মিতভাবে চেকিং করা। ক্যাম্পাসে যানজট কমাতে সাইকেল ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, নিরাপদ হাঁটার জন্য ফুটপাত ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো সংস্কার করা।

৬. হয়রানিমুক্ত প্রশাসনিক সেবা, শিক্ষা ঋণ এবং ক্যাম্পাসভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা

রেজিস্ট্রার ভবনের ‘লাঞ্চের পরে আসেন’ কালচার দূর করে ভবনের সার্বিক কার্যক্রম হয়রানিমুক্ত, আধুনিক ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপট উত্তোলন, নানাবিধ ফি প্রদানসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করাসহ ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে একটি ডিজিটাল সাপোর্ট ডেস্কও তৈরি করা।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য মেধাভিত্তিক বৃত্তি ও সহজলভ্য শিক্ষা ঋণ ব্যবস্থা চালু করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অধিক হারে পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা, বিশেষত ক্যাফেটেরিয়া, রেজিস্ট্রার বিল্ডিং, লাইব্রেরি, জিমনেসিয়াম, বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প, টিউটোরিয়াল সাপোর্ট, ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীদের ঘণ্টাভিত্তিক অন-ক্যাম্পাস কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা।

ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টারকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ইন্টার্নশিপ ও জব ফেয়ার আয়োজন করা, অন-সাইট রিক্রুটমেন্ট শুরু করা এবং প্রাইভেট-পাবলিক জব প্লেসমেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

দেশবরেণ্য পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদেরকে আমন্ত্রণ করে নিয়মিত ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম এবং ট্রেনিং ও মোটিভেশনাল সেশন আয়োজন করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দোকান ও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নতুন-নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে স্টার্ট-আপ ক্যাপিটাল ও মেন্টরশিপ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং শেয়ার্ড ওয়ার্ক স্পেসের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

৭. তরুণদের গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্তকরণ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি

বৈচিত্র্যময় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাঙ্গণ গড়তে নৃগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা উৎসাহিত করা।

খেলাধুলায় উন্নতির জন্য বার্ষিক আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলাধুলার টুর্নামেন্ট চালু করা, কেন্দ্রীয় জিমনেসিয়ামের আধুনিকায়ন, খেলার মাঠ ও ইনডোর সুবিধার সংস্কার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে সহায়তা প্রদান।

ক্যাম্পাস ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাদক চক্র দমন, সুস্থ বিনোদন ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়ক গান-বাজনা, সুস্থ বিনোদনমূলক বিতর্ক, কমেডি, এবং নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

নাটক, শর্ট ফিল্ম, ফটোগ্রাফি, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, সৃজনশীল লেখা ও চলচ্চিত্র নির্মাণসহ শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান। কেন্দ্রীয়, হল ও বিভাগভিত্তিক প্রতিটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া সংগঠনের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ যৌক্তিক হারে বৃদ্ধি করা।

প্রতিবছর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারুণ্যের উৎসব' আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের প্লাটফর্ম তৈরি করা।

৮. শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল সুবিধা, সাইবার সিকিউরিটি এবং সাইবার বুলিং প্রতিরোধ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত অ্যাকাডেমিক ই-মেইল আইডির স্টোরেজ লিমিট বৃদ্ধি, অ্যাকাউন্টের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং তা ব্যবহার করে বিশ্বমানের অনলাইন জার্নাল ও লাইব্রেরি অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা এবং সব ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে ক্লাউড স্টোরেজ প্রদান।

মাইক্রোসফট অফিস, গুগল ড্রাইভ অ্যাপ্লিকেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিংসহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ডিজিটাল স্কিলসমূহে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ ও লার্নিং সেশন পরিচালনা করা। প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন টুলস যেমন- ক্যানভা, অ্যাডোবি ইত্যাদি সফটওয়্যারের সাবস্ক্রিপশন প্রদান করা।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক্স, বিগ ডেটা, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন। শিক্ষার্থীদের জন্য সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধে একটি সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন করা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল লিটারেসি, মিস ইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, ফেক নিউজ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করা। শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য আইনজীবীদের একটি প্যানেল তৈরি করা এবং এর মাধ্যমে লিগ্যাল এইড সাপোর্ট ও কাউন্সেলিং সার্ভিস চালু করা।

৯. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ, সবুজায়ন ও প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাস তৈরি

প্রতিটি হল, ক্যাফেটেরিয়া, অ্যাকাডেমিক ভবন ও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের মান সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি, উদ্যান, গাছপালা ও সবুজ এলাকা সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আয়োজন করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুনভাবে নির্মিত প্রতিটি অবকাঠামো যেন পরিবেশবান্ধব হয়, সেটি নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে দায়বদ্ধ করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করতে আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত প্রাণীদের জন্য খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, প্রাণীর বিরুদ্ধে নির্যাতন প্রতিরোধ ও তাদের দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

১০. কার্যকর ডাকসু এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিকরণ

একাডেমিক ক্যালেন্ডারে নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত করা। ডাকসুকে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা।

শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড, সিম্পোজিয়াম, কনফারেন্স, সেমিনার ও একাডেমিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি এবং প্রয়োজন অনুসারে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফান্ড প্রদান করা।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত