ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২

‘ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল আ’লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে’

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৬:১২:৩৬

‘ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল আ’লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমাদের দেশে ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, অনেকে ফ্যাসিস্টদের প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য চিন্তা করছেন। যারা বলেন তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য চিন্তা করছেন তারা কি ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেননি?তারা এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। তারা নিষিদ্ধ দল ছিল। শহীদ জিয়া তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু তাদের এমন কোনো মিটিং নেই, এমন কোনো কর্মসূচি নেই যে, তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সমর্থন করেছেন এবং তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন নাই। এরপরে আমরা দেখেছি, প্রতিটি ঘটনায় তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করেছেন।

উদাহরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ৮৬ সালে নির্বাচনে যাওয়া, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেছে। মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক আর কাজ করেছে আারেক। ঠিক একইভাবে তারাও করেছে। এরপরে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করলো সেই আন্দোলন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারাও করেছে।

রিজভী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ওই সময়ে তারা হত্যাও করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র টিটোকে শিবির (ইসলামী ছাত্র শিবির) গুলি করে হত্যা করেছিল। ১৯৯৫-৯৬ সালে যে আন্দোলন হয়েছিল এটা তো কারও ভুলে যাওয়ার কথা না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যাওয়া, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যেতে চাননি। তাদেরই নেতারা বাধ্য করেছিল, না হলে তারা স্বতন্ত্রভাবে করবে। এখন আবার তারা স্বরূপে বেরিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাচ্ছে। কিন্তু এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে, এই দেশটি শেখ হাসিনার মতো রক্ত পিপাসু দানবকে প্রশ্রয় দিয়েছে নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করার জন্য।

তিনি বলেন, নিজের দেশের মানুষকে হত্যা করে ক্ষমতাকে চিরতরে আঁকড়ে রাখার যার বাসনা ছিল এরকম মডেলে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন শেখ হাসিনা, সেই ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান বা পুনর্জাগরণের কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নেই।এদেশের মানুষ মধ্যপন্থি, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু গণতন্ত্রপ্রিয়। তারা কথা বলতে চায় নির্ভয়ে, তারা এক-দুই বেলা কম খেলেও তাদের কণ্ঠের আওয়াজ তীব্র করতে চায়। সেদেশের মানুষকে জোর করে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারায় কেউ মনে করে যে নিয়ে আসতে চাইবে এটা জনগণ হতে দেবে না।

রিজভী বলেন, যে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলির জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন এবং গতকালকে যে আলামতগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে ডকুমেন্ট ও টেলিফোন কথোপকথনের ক্লিপসহ- এসব যে কেউ শুনলে শিহরিত হয়ে উঠবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি, রাজনীতি করেছি আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর মুখোমুখি ছিলাম। শেখ হাসিনার বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি, নিজেরা নিপীড়নের শিকার হয়েছি, দিনের পর দিন রিমান্ডে থেকেছি, মাসের পর মাস জেলখানায় থেকেছি। তার ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। কিন্তু এর গভীরে যে আরও ভয়াবহতা ছিল, তারা একটি আন্দোলনকে দমানোর জন্য কী ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিল সেটা এখন প্রতিদিন যে আলামতগুলো আদালতে জমা হচ্ছে, সেখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা থেকে বোঝা যায়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে কথোপকথনের যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতেই আমাদের মধ্যে উদ্বেগ-শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। যদি এই ফ্যাসিবাদী শক্তির আবার পুনরুত্থান ঘটে তাহলে ৫ আগস্টের আন্দোলনকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষের কী ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করতে হবে সেটা চিন্তা করে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন, যত সরকারি ভবনে আগুন জ্বালিয়েছে, মেট্রোরেলের স্টেশনে যে আগুন লাগানো হলো সব শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। সেটা আজ সেই টেলিফোনের কথোপকথনে থেকে বেরিয়ে আসছে, সত্য বেরিয়ে আসছে। অথচ ওই সমস্ত নাশকতার ঘটনার দায় তখন আন্দোলনকারী মানুষদের ওপর চাপানো হয়েছে। আমার ওই সময় মেট্রোরেল স্টেশনের পোড়ানোর মামলায় আসামি করা হয়েছিলো, নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে যারা গ্রেফতার হয়েছেন। অথচ এখন আমরা প্রমাণ পাচ্ছি এইসব ঘটনার সব নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই।

তিনি বলেন, নাশকতার যে অভিযোগ ওই সময় করা হয়েছে সেই নাশকতা তিনি (শেখ হাসিনা) নিজে সৃষ্টি করেছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) এমন এক সর্বনাশা খেলায় মেতেছিলেন যার ফলে দেশ, জাতি এবং মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়েছিল ওই সময়ে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু উপদেষ্টার কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। আজকের গণমাধ্যমে এসেছে, উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া তার নিজ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ নিয়েছেন, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা এক ধরনের বৈষম্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের এলাকার উন্নয়নের নামে ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

একে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত