ঢাকা, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জুলাই আন্দোলনের উত্তাপে ভেঙে গেল নিউইয়র্ক বইমেলা

২০২৫ মে ১৭ ১০:৫১:৫৫
জুলাই আন্দোলনের উত্তাপে ভেঙে গেল নিউইয়র্ক বইমেলা

ডুয়া প্রবাস ডেস্ক: নিউইয়র্কের বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলাকে ঘিরে এবার দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন উত্তেজনা ও বিভক্তি। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসা এই ‘প্রাণের মেলা’ প্রথমবারের মতো বিভক্ত দুই ভাগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ২৩ মে থেকে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে চার দিনব্যাপী বইমেলার মূল আয়োজনের বিপরীতে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা’ নামে পাল্টা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সদ্য পদত্যাগী সভাপতি ড. নূরুন নবী।

এই বিভক্তির পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলন এবং তা নিয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যকার মতপার্থক্য। ড. নবী দাবি করেছেন, মুক্তধারার বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ সদস্য জুলাই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যা তার মতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সহায়তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। এছাড়া, বইমেলার উদ্বোধক হিসেবে কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানোতেও তিনি আপত্তি জানান, কারণ তিনি ‘সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদপন্থী লেখক’ এবং ‘জুলাই সন্ত্রাসের সমর্থক’।

তবে প্রশ্ন উঠেছে—যার নেতৃত্বে এই নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে, সেই ড. নবী কি শুরু থেকেই এসব বিষয়ে অবগত ছিলেন না? জানা গেছে, সাদাত হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল নির্বাহী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে, যেখানে ড. নবীও উপস্থিত ছিলেন এবং আপত্তি তোলেননি। হঠাৎ করে তার অবস্থান পরিবর্তন এবং পাল্টা বইমেলার ঘোষণা অনেকের কাছেই রহস্যজনক ঠেকছে।

এই সংকটকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দুই ভাগে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একটি পক্ষ সরাসরি আওয়ামী লীগপন্থী এবং হাসিনার সমর্থক হিসেবে পরিচিত, যারা বইমেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, জুলাই আন্দোলনের সমর্থকরা নিজেদের ‘গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার’ ধারক দাবি করছেন।

জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে টাইমস স্কয়ারে যে বিশাল সমাবেশ হয়েছিল, তা থেকে স্পষ্ট হয় যে, কমিউনিটির বড় অংশ স্বাধীন মতের চর্চায় বিশ্বাসী। তবে হাসিনাপন্থী মহল পাল্টা কোনো বড় আয়োজন করতে না পারলেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রভাব খাটিয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।

ড. নবীর পদত্যাগের পর পরই পাল্টা বইমেলা আয়োজনের ঘোষণা এবং ফেসবুকে দেওয়া তার রাজনৈতিক বার্তাগুলো পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। তিনি লিখেছেন, "প্রবাসে রুখে দাঁড়াও ইউনূস-সমর্থকদের। বাঁচাও বাংলাদেশ"—যা বইমেলাকে নিছক সাংস্কৃতিক আয়োজন থেকে সরিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক লড়াইয়ের মঞ্চে পরিণত করছে।

এই বিতর্কে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, বাংলা বইমেলা বরাবরই ছিল একটি অরাজনৈতিক, সর্বজনীন সাংস্কৃতিক আয়োজন। এবার তা পরিণত হয়েছে রাজনীতির বিভাজনের প্রতিচ্ছবিতে। মুক্তধারা ও বঙ্গবন্ধু বইমেলা—দুটি আলাদা আয়োজন প্রবাসী কমিউনিটির মধ্যে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও আস্থার সংকট তৈরি করেছে, তা নিরসনে ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখক।

সার্বিকভাবে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। বইমেলাকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই বিভাজন শুধু একটি উৎসবের চরিত্রকেই পরিবর্তন করেনি, বরং প্রবাসী সমাজের ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে