ঢাকা, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

২০২৫ অক্টোবর ২৬ ১৯:৩৪:২২

দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সকল তফসিলি ব্যাংককে একটি নিবেদিত রেজোলিউশন কো-অর্ডিনেশন ইউনিট (আরসিইউ) বা ঝুঁকি-পর্যবেক্ষণ সেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ইউনিট প্রতিটি ব্যাংকের ঝুঁকি সূচক পর্যবেক্ষণ করবে এবং সম্ভাব্য আর্থিক সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি রাখবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য এটি একটি একক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে, যার মাধ্যমে মূলধন পর্যাপ্ততা, তারল্য, সম্পদের গুণগত মান ও বৃহৎ ঋণ প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি সূচকের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। লক্ষ্য হলো— ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতার প্রাথমিক লক্ষণ সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় রেজোলিউশন বা পুনর্গঠন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৩ অক্টোবর ‘ব্যাংক রেজোলিউশন রেগুলেশনস, ২০২৫’ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবিধান জারি করেছে। এই প্রবিধান দুর্বল ও অকার্যকর ব্যাংকগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, আমানতকারীদের সুরক্ষা ও দুর্দশাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সমাধান প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।

প্রবিধান অনুযায়ী, ব্যাংকের কার্যক্রম ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে কর্মী ছাঁটাই বা বড় ধরনের সাংগঠনিক পরিবর্তনের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক রেজোলিউশন ডিপার্টমেন্ট (বিআরডি)-এর অনুমোদন নিতে হবে। এই বিভাগই রেজোলিউশন সংক্রান্ত কার্যক্রমে স্বাধীন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে।

৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদিত এই প্রবিধান ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ কার্যকর করেছে। এটি এমন এক সময়ে জারি করা হলো, যখন বেশ কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকট, মূলধন ঘাটতি ও আমানতকারীদের আস্থাহীনতার মুখোমুখি।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংকে একজন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে রেজোলিউশন কো-অর্ডিনেশন ইউনিট গঠন করতে হবে। ইউনিটটি তথ্য জমা, সতর্ক সংকেত পর্যবেক্ষণ এবং রেজোলিউশন পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি বজায় রাখবে।

BRD নিয়মিতভাবে ‘রেজোলভেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট’ পরিচালনা করবে, যাতে ব্যাংকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন আইনি বা কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা যায়। ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর ওপর জরিমানা, ডিভিডেন্ড নিষেধাজ্ঞা বা সংশোধনের জন্য কাঠামোগত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

আমানতকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রবিধানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রেজোলিউশনের সময় দ্রুত আমানত বীমা তহবিল থেকে অর্থ প্রদান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং পরিষেবা চালু রাখার ব্যবস্থা থাকবে।

রেজোলিউশন প্রক্রিয়া শুরু হবে তখনই, যখন কোনো ব্যাংক অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত হবে বা বেসরকারি ব্যবস্থার মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে বিআরডি ব্যাংকের মূলধন, তারল্য, সম্পদের মান ও দায় পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে, বাংলাদেশ ব্যাংক একজন প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে, যিনি পরিচালনা পর্ষদকে প্রতিস্থাপন করে ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবেন।

প্রবিধানে নতুন রেজোলিউশন টুলসও যুক্ত করা হয়েছে— যেমন ‘পারচেজ অ্যান্ড অ্যাসাম্পশন’, ‘ব্রিজ ব্যাংক’, ‘বেইল-ইন’ এবং সম্পদ স্থানান্তর ব্যবস্থা।

ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে রেজোলিউশন প্রক্রিয়ার সব ধাপে শরিয়াহ্‌-সম্মতি বজায় রাখতে হবে। এজন্য বিআরডি-কে একটি শরিয়াহ্‌ উপদেষ্টা প্যানেল গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক সংযুক্ত কোনো একীভূতকরণ হলে, উভয় প্রতিষ্ঠানকেই শরিয়াহ্‌-সম্মত হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ‘ব্যাংক রেজোলিউশন রেগুলেশনস, ২০২৫’ দেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্যাংক পুনর্গঠন কাঠামো হিসেবে কাজ করবে। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে এবং একটি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছ ও আমানতকারী-কেন্দ্রিক ব্যাংক সংকট ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরি করবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত