ঢাকা, শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২

রাজনীতি মুক্ত রাখার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে রোকেয়া হলে ভিপি পদে লড়ছেন ফারজানা আরজু

ডুয়া নিউজ- বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫ আগস্ট ২৩ ১৬:৩৮:২৭
রাজনীতি মুক্ত রাখার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে রোকেয়া হলে ভিপি পদে লড়ছেন ফারজানা আরজু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে রোকেয়া হল সংসদে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন ফারজানা আক্তার আরজু। যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রোকেয়া হল থেকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াদের একজন। তবে জুলাইয়ের পর যোগ দেননি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে বরং হল রাজনীতির বিরুদ্ধে থেকেছেন সোচ্চার। লড়াকু এই যোদ্ধা এবার হতে চান রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি। ভিপি পদে নির্বাচনে দিয়েছেন ১১ দফা ইশতেহার। সেখানেও হলে সকল প্রকার রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায় তাকে।

নিজের উঠে আসার গল্পের কথা জানিয়ে ফারজানা আরজু বলেন, সবার মতো আমিও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী। ডাকসুর মতো প্লাটফর্মে কখনো নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস হতো না,যদি না পরিস্থিতি আমাকে সেদিকেই ধাবিত করতো। ২০১৯ সালে যখন হলে উঠি তখন থেকেই হল রাজনীতির যে ভয়াবহ রূপ দেখেছি, নিজে যে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে গেছি সেসব আমাকে আজকের এই জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে। নিজে ছাত্রলীগের নেত্রীর হাতে মার খেয়েছি, লিগ্যাল রুমে ছাত্রলীগের পাওয়ার খাটানো নেত্রীর দ্বারা নানা নিপীড়নের শিকার হয়েছি। এছাড়া আমার বান্ধবীদের দেখেছি এক রুমে ১০-১৫ জন গাদাগাদি করে থাকার জন্য ও সারাদিন প্রোগ্রাম করেছে, ক্লাস, পরীক্ষা বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের নেত্রীদের প্রটোকল দিয়েছে। এমনকি কোন কারণে একদিন প্রোগ্রাম করতে না পারায় গভীর রাতে বিছানা বালিশ ছুড়ে দিয়ে রুম থেকে বের দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া হল রাজনীতির আরো বহু কুৎসিত দিক ছিল যা আমাকে এত প্রতিবাদী এবং লড়াকু বানিয়েছে, আমি অধিকারের কথা বলতে শিখেছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে শিখেছি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে রোকয়া হল থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি, ছাত্রলীগকে হল থেকে বের করে রোকয়া হলকে রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করেছি। কিন্তু আমরা যে অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে গেছি আমরা কেউ-ই চাইনা আমাদের জুনিয়ররা ও সেই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হোক।

আরজু জানান, রোকেয়া হলকে সকল রকম দলীয় রাজনীতি মুক্ত রাখার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আমি ডাকসু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি আমি আমার হলকে গোপন ও প্রকাশ্য রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীবান্ধব ও পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বস্তির আবাসস্থল নিশ্চিত করতে পারবো।

ফারজানা আরজু ইশতেহারের কথা জানিয়ে বলেন, হলকে গুপ্ত অথবা প্রকাশ্য সকল ছাত্ররাজনীতির ভয়াবহতা দূর করে সুষ্ঠু ও পরিবেশবান্ধব একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখা আমার অঙ্গীকার। আমরা জানি অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে হলে তৎপরতা চালায়, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা এবং সচেতন রাখতে আমি কাজ করবো; প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমার দৃঢ় অবস্থান নিশ্চয়তা দিচ্ছি এবং নির্বাচিত সংসদ এক বছরের বেশী দায়িত্ব কুক্ষিগত না করার বিষয়ে আমার দৃঢ় অবস্থান থাকবে; হলের বাজেট, তা কোন কোন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে তা জেনারেল মিটিং এ উন্মুক্ত করা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, হাউস টিউটর, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলের রূঢ় আচরণ, শিক্ষার্থীবান্ধব না হওয়া, কাউকে একক ভাবে ফেবার করার বিষয়ে আমি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি; নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি সমান আচরণ ও মর্যাদার প্রশ্নে আপোষহীন মনোভাব রাখা রোকেয়া-হল প্রতিনিধির দায়িত্ব বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আমি বুলিংয়ের শিকার হওয়া নারী শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ; যার যার পোশাকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে, স্বাধীনতার নাম করে হলের ভিতর নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করা, সমকামিতার মতো নোংরা ট্রেন্ড চালু করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবো।

এছাড়া হারুন দাদুর টেন্ডার বাতিল করা,সেখানে মেস সিস্টেম মিলের ব্যবস্থা করা, ভাল মানের খাবার যেন স্বল্প বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায় তার জন্য কম কর্মী নিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরা মেস ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নিবে, সব রকম খরচ নিজেরা তদারকি করবে; লেট গেট ১১ টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা রাখা,ইমারজেন্সি কেইসে ( দুর্ঘটনা সাপেক্ষে) লেট গেইট দিয়ে বের হওয়ার প্রসেসটা শিথিল করা, হলের প্রবেশগেট ডিজিটালাইজড করতে প্রশাসনকে বাধ্য করা। এতে করে পোশাক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আপুদের হয়রানি থেকে মুক্তি লাভের চেষ্টা অব্যাহত থাকব; হলের চলমান অন্যতম সংকট—সিট বরাদ্দ, পানি, লিফট এবং পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সমস্যা সমাধান করা আমার ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে এক্সটেনশন (অপরাজিতা) ভবনে এলটমেন্ট ধীরে ধীরে বন্ধ করে সেটা ভেঙে বিকল্প ব্যবস্থা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব; রিডিংরুমে পর্যাপ্ত ফ্যান, লাইট ও চেয়ার-টেবিল সংযুক্ত করা,যথাযথ অধ্যয়ন পরিবেশ নিশ্চিত করা; গেস্টরুম, জিমনেশিয়াম, ল্যাব, মিউজিয়াম সহ সকল সুযোগ সুবিধা যেন মেয়েরা নিতে পারে সেটা নিয়ে কাজ করবো, প্রয়োজন অনুসারে কর্তৃপক্ষের সহায়তায় মেরামত ও সংস্কার করবো; টিএসসির প্রোগ্রামের কারণে প্রচণ্ড শব্দের যে সমস্যা, সেটা নিয়ে কাজ করবো।তাছাড়া রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে কাজ করবো, পাশে থাকবো।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত