ঢাকা, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চাকা খুলে পড়া বিমানের পাইলট-এটিসির শেষ ৩ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস কথোপকথন 

২০২৫ মে ১৭ ১১:৩৯:০২
চাকা খুলে পড়া বিমানের পাইলট-এটিসির শেষ ৩ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস কথোপকথন 

ডুয়া ডেস্ক: কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করার সময় বিমানের একটি চাকা (বাম দিকের ল্যান্ডিং গিয়ার) খুলে পড়ে। এরপরও বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সফলভাবে অবতরণ করে। পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রথম চেষ্টাতেই ফ্লাইটটি নিরাপদে নামাতে সক্ষম হন। তবে অবতরণের আগের শেষ তিন মিনিট ছিল চরম উত্তেজনাময়।

বিমান ও এটিসির (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) মধ্যে সেই মুহূর্তের কথোপকথনের রেকর্ড এখন সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে।

ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে। ঠিক তখনই বিমানটিকে রানওয়ের কাছে দেখা যায় এবং ঢাকার এটিসি রুম থেকে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়।

এটিসি জানতে চায়: “আপনি কি এই পরিস্থিতিতে রানওয়ে ১৪-তে অবতরণ নিশ্চিত করছেন?”

পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দেন: “অ্যাফার্ম (হ্যাঁ, নিশ্চিত করছি)।”

এরপর এটিসি জানায়: “রানওয়ে ১৪ অবতরণের জন্য প্রস্তুত। আপনি নামতে পারেন।”

এই বার্তার ঠিক ৯০ সেকেন্ড পর, দুপুর ২টা ২২ মিনিটে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে।

এসময় রানওয়ের আশপাশে প্রস্তুত ছিল ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট। তারা সতর্ক অবস্থানে থাকলেও অবতরণের সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

বিমান থেমে যাওয়ার পর পাইলট এটিসিকে বলেন: “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা নিরাপদে অবতরণ করেছি। কন্ট্রোল টাওয়ারকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের সহযোগিতা প্রশংসনীয়।”

এটিসি নিশ্চিত হতে চায়: “আপনি কি নিশ্চিত করছেন যে আপনি নিরাপদে অবতরণ করেছেন?”

পাইলট জবাব দেন: “হ্যাঁ, আমি আবারও নিশ্চিত করছি।”

এরপর এটিসি আরও জানতে চায়: “সবকিছু কি একেবারে স্বাভাবিক আছে?”

পাইলট জানান: “এভ্রিথিং ইজ অ্যাবসোলুটলি ফাইন (সব কিছু একেবারে ঠিক আছে)।”

এটিসি উত্তরে বলে: “আলহামদুলিল্লাহ, ধন্যবাদ আপনাকে।”

পাইলটও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন: “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের এটিসিকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাবেন।”

এটিসি জানায়: “আপনার বার্তাটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়া হবে। আপনি ট্যাক্সিওয়েতে অবস্থান করুন।”

বিমানের নিরাপদ অবতরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই "আলহামদুলিল্লাহ" বলে করতালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।

ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত এমন অবস্থায় পাইলট আকাশে চক্কর দিয়ে কিছু জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলে, তারপর অবতরণ করেন। এতে আগুন লাগার সম্ভাবনা কমে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পাইলট প্রথম চেষ্টাতেই অবতরণে সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে standby-তে ছিল।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানায়, ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ ও তার দলের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় দুর্ঘটনাটি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। ক্যাপ্টেন জামিলের রয়েছে ৮,০০০ ঘণ্টার ফ্লাইং অভিজ্ঞতা।

ঘটনার পর যাত্রীরা পাইলট, ক্রু ও বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিমান কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, চিফ অব সেইফটি ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে